খাইরুল ইসলাম আল আমিন: বাংলাদেশের সাংবাদিকতা যখন নানা প্রতিকূলতা আর শঙ্কার মধ্যে দিয়ে এগোচ্ছে, তখন সাংবাদিক তুহিনের নির্মম হত্যাকাণ্ড যেন স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর নিক্ষিপ্ত আরেকটি ঘৃণ্য আঘাত। তুহিন ছিলেন এক সাহসী ও অনুসন্ধানী রিপোর্টার, যিনি নিরপেক্ষভাবে সত্যের পক্ষে কলম ধরতেন, অন্যায়ের মুখোশ খুলে দিতেন নির্ভয়ে। এমন একজন সংবাদযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা শুধু একজন ব্যক্তিকে নয়, আমাদের গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের অধিকার ও মুক্ত সাংবাদিকতাকেই কবর দেওয়ার চেষ্টা।
তুহিন হত্যার পেছনে যে-চক্রই থাকুক না কেন, এটা নিছক কোনো ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল না। এটা ছিল একটি সুপরিকল্পিত হামলা—তাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য, যেন আর কেউ সাহস না পায় দুর্নীতি-সহ দুর্বৃত্তশক্তির মুখোশ উন্মোচন করতে। তুহিন হয়তো চলে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন সাংবাদিকতা পেশার প্রতি এক নতুন চ্যালেঞ্জ ও দায়বদ্ধতা।
আমরা যারা সংবাদমাধ্যমে কাজ করি, আমরা জানি প্রতিটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ রাষ্ট্র আজও আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেনি। বরং দেখা যায়, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার বদলে ঘটনাগুলো ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সত্য আর অন্যায়ের পার্থক্য মানুষের দৃষ্টিতে একসময় মুছে যাবে।
তুহিন হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার এখন সময়ের দাবি। রাষ্ট্র, প্রশাসন, এবং সব গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে প্রশ্ন—এই হত্যার বিচার কবে হবে? সাংবাদিক হত্যার বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ না হলে এমন নির্মম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবেই।
তুহিনের রক্ত আমাদের প্রশ্ন করতে শিখিয়েছে, প্রতিবাদ করতে শিখিয়েছে। আমরা থামব না। যতদিন না সত্য প্রতিষ্ঠা পায়, যতদিন না সাংবাদিকরা নিরাপদে কাজ করতে পারে—ততদিন তুহিনের কণ্ঠ আমাদের মধ্যেই বেঁচে থাকবে।
সাংবাদিক তুহিন হত্যার বিচার শুধু একটি মামলা নয়, এটি হবে বাংলাদেশের মুক্ত সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ের অংশ। এই লড়াই আমরা চালিয়ে যাব—সত্যের পতাকা হাতে।