গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে প্রায় এক বছর পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তথ্য পেলেন সাংবাদিক হলি সিয়াম শ্রাবণ। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচীর ১০ কোটি ৫৮লাখ ৯২হাজার ৮শ টাকার প্রকল্পের তালিকা আবেদনকারীর নিকট হস্তান্তর করেন গৌরীপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল রানা পাপ্পু।
এর আগে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা থাকলেও তথ্য দেননি তৎকালিন গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফৌজিয়া নাজনিন। পরে গত ১৭ জানুয়ারি তথ্য কমিশন নির্দেশনা দেন ১০ দিনের মধ্যে তথ্য প্রদান ও ইউএও ফৌজিয়া নাজনিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের।
আরও পড়ুন=>> তথ্য দিতে গড়িমসি! ডিসির নির্দেশও মানছেন না ইউএনও
জানা যায়, গত ২০২৩ সনের ২ ফেব্রুয়ারী তথ্য চেয়ে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে আবেদন করেন সাংবাদিক হলি সিয়াম শ্রাবণ। আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে তথ্য না দেয়ায় সে বছরের ১৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবরে আপীল করেন শ্রাবণ। আপীলের বিষয়টি আমলে নিয়ে মে মাসের ১০ তারিখে শুনানীর দিন ধার্য্য করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুস্তাফিজার রহমান। শুনানীর দিন আপীলকারীর বক্তব্য শুনে আপীল মঞ্জুর করে তথ্য সরবরাহ করে দেয়ার জন্য গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও ফৌজিয়া নাজনিনকে নির্দেশ প্রদান করেন (ডিসি) মুস্তাফিজার রহমান। কিন্তু ডিসির নির্দেশের প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও আবেদনকারীকে তথ্য না দেয়ায় তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেন সাংবাদিক শ্রাবণ।
আরও পড়ুন=>> ঈশ্বরগঞ্জের প্রকৌশলীকে সতর্ক ও গৌরীপুরের সাবেক ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বুধবার (১৭ জানুয়ারি/২৪) প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক, তথ্য কমিশনার শহীদুল আলম ঝিনুক এবং তথ্য কমিশনার মাসুদা ভাট্টি তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানী শেষে তথ্য প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার পূর্বতন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) (বর্তমান ইউএনও শ্রীবরদী, শেরপুর কর্মরত) ফৌজিয়া নাজনীনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন সচিবকে নির্দেশ দেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (পূর্বতন গৌরীপুরের ইউএনও) ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, আমাকে সেই সময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার সোহেল রানা পাপ্পু জানিয়েছিলো আবেদনকারী তথ্য নিয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সোহেল রানা পাপ্পু জানান, আবেদনকারী তথ্য মূল্য পরিশোধ করার সঙ্গে সঙ্গে তথ্য দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে পারবো না।
আবেদনকারী জানান, তিনি বারবার ঘুরেও তথ্য পাননি। তথ্য কমিশন পর্যন্ত তাকে তথ্যের জন্য যেতে হয়েছে। আজ তথ্য পাওয়ায় তথ্য কমিশনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
এ দিকে তথ্য কমিশনের আদেশ অনুযায়ী আবেদনকারী হলি সিয়াম শ্রাবণকে ২০২১-২২অর্থ বছরের এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় প্রথম পর্যায়ের ২৮টি প্রকল্পের অধিনে ব্যয়িত ২ কোটি ৭১লাখ ৫২হাজার টাকার, দ্বিতীয় পর্যায়ের ৩০টি প্রকল্পের ব্যয়িত ২ কোটি ৭১লাখ ৫২হাজার টাকার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম পর্যায়ে ৩০টি প্রকল্পের ২ কোটি ৭১লাখ ৫২হাজার টাকার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৯টি প্রকল্পে ব্যয়িত ২ কোটি ৪৪লাখ ৩৬হাজার ৮শ টাকার প্রকল্প তালিকা ও শ্রমিকদের তালিকা প্রদান করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ১১৭টি প্রকল্পের অধিনে সিংহভাগ প্রকল্পের কাজ ছাড়াই প্রকল্পের অর্থ লুটপাট হয়েছে। যে কারণে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে ফাইলে লালফিতার বাঁধন দিয়ে আটকে রাখে। সেই লালকাটা কাটলে তথ্য কমিশনের এক আদেশে।