খাইরুল ইসলাম আল আমিন॥ সম্প্রতি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে রাজীবপুর ভূমি অফিসের অফিস সহকারীর ঘুষ নেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনার পরে টাকা ছাড়া ভূমিসেবা না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) ছানোয়ার হোসেনকে তলব ও অফিস সহকারী আহাম্মদ হোসেনকে শোকজ করেছেন ঈশ^রগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা যায়, খারিজের জন্য টাকা লেনদেনের সেই ভিডিও গত বুধবার রাতে দুর্নীতি বার্তা ডটকম নামক একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে প্রকাশিত হয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, সহকারী ভূমি কর্মকর্তার চেয়ার ফাঁকা। টেবিলে দাঁড়িয়ে কাগজপত্র নিয়ে কথা বলছেন অফিস সহকারী আহাম্মদ হোসেন। ৫০০ টাকার নোট গুনে আহাম্মদের হাতে দেওয়া হচ্ছে। সেই টাকা নিজের পকেটে ঢোকান আহাম্মদ। সেখানে ১৫ হাজার টাকা ছিল বলে নিশ্চিত করেন আহাম্মদ হোসেন। আহাম্মদ হোসেনের কর্মস্থল পাশের উচাখিলা ইউনিয়ন হলেও বছরখানেক আগে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে রাজীবপুরে পাঠায় কর্তৃপক্ষ।
পরে গত বৃহস্পতিবার শতাধিক ভুক্তভোগী স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে। ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রাজিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সানোয়ার হোসেন কর্মরত আছেন প্রায় ছয় বছর যাবৎ। ভূমি অফিসের পাশেই তাঁর বাড়ি হওয়ায় অফিস চলাকালীন তিনি তাঁর বাড়িতে অবস্থান করেন। ওই অবস্থায় বেশির ভাগ সময়েই ভূমি সেবাগ্রহীতারা অফিস কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর দেখা পায় না। যে কারণে ফোনে অথবা সরাসরি নায়েবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁর অফিস সহায়ক আহাম্মদ এবং প্রতিবেশী ভাতিজা হিরকের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। হিরক ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কোনো কর্মচারী নন। তবে তিনি দিনভর অফিসেই থাকেন এবং নায়েবের ঘুষের লেনদেন করেন। হিরক এবং অফিস সহায়ক আহাম্মদ মিলে খারিজ প্রতি ৮ হাজার থেকে ৪০ হাজারেরও ঊর্ধ্বে টাকা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করেন।
তবে প্রতিবেদকের কাছে আহাম্মদ জানান, ‘ভিডিওটি মিথ্যা ও বানোয়াট। এগুলো ডিসিআর ফি এর টাকা ছিল। ডিসিআর ফি কত টাকা জানতে চাইলে তিনি কলটি কেটে দিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।
তবে ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম উজ্জ্বলের ভাষ্যমতে, তিন বছর ধরে খারিজের জন্য ঘুরছিলেন তিনি। অনেক লোক ধরেও যখন কাজ হয়নি তখন টাকা দেওয়ার ২০ দিনের মধ্যে খারিজটি করে দেওয়া হয়। ২০ শতাংশ জমি খারিজ করতে ১৮ হাজার টাকায় চুক্তি হয় আহাম্মদের সঙ্গে। নায়েবের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হিরকের সঙ্গে যোগাযোগের পর সে আহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ভিডিও যখন করা হয় তখন ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হলেও পরে আরও তিন হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নায়েব নিজের হাতে টাকা নেন না। আত্মীয় হিরক ও অফিস সহকারী আহাম্মদের মাধ্যমেই টাকা লেনদেন হয়। আরও ৩০ শতাংশ জমি খারিজের জন্য আহাম্মদের হাতে ৪০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) ছানোয়ার হোসেন বলেন, অভিযোগটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ভিডিও এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আহাম্মদেই বলতে পারবে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান জানান, নায়েবের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে, আগামী ২৭ তারিখে অভিযোগকারী ও নায়েবকে তলব করা হয়েছে। অফিস সহকারীর টাকা নেওয়ার ভিডিও দেখার পর তাকে শোকজ করা হয়েছে। ঘটনার বিস্তারিত জানতে তাকে ডাকা হয়েছে। তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।