Durnitibarta.com
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২ জানুয়ারি ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

স্কুলে গিয়ে কেউ খুশি, হতাশ বেশি

প্রতিবেদক
Dhaka Office
জানুয়ারি ২, ২০২৫ ৪:৫১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিউজ ডেস্ক:  শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। পৌষের শীত আর ঘন কুয়াশাকে উপেক্ষা করে গতকাল বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বল্প পরিসরে বিনা মূল্যে নতুন বই বিতরণ করা হয়। অপচয় রোধ করতে বরাবরের মতো এবার ঘটা করে হয়নি বই উৎসব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উৎসবের আমেজ না থাকলেও নতুন বছরের শুরুতেই নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। নতুন শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৪১ কোটি পাঠ্যবই প্রয়োজন। এর মধ্যে মাত্র ৬ কোটি পাঠ্যবই গতকাল বিতরণ করা হয়েছে।

এ কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বই পায়নি। স্কুলে গিয়ে কেউ কেউ খুশি হলেও, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হয়েছেন হতাশ। বছরের মধ্যভাগে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, নতুন শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন, আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা ও পাণ্ডুলিপি পেতে দেরির কারণে এবার সবার হাতে সব বই পৌঁছাতে আরও দুই মাস লাগতে পারে বলে জানা গেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পরিকল্পনা ছিল, বছরের প্রথম দিন সব শ্রেণির শিক্ষার্থীর হাতে অন্তত তিনটি করে নতুন বই (বাংলা, ইংরেজি ও গণিত) দিয়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার। কিন্তু সেই টার্গেট বাস্তবায়ন হয়নি। সব পাঠ্যবই কবে নাগাদ শিক্ষার্থীদের দেওয়া যাবে, তার প্রতিশ্রুতি দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। একই সঙ্গে বছরের প্রথম দিন সব শিক্ষার্থীর হাতে পাঠ্যবই পৌঁছাতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্শন উদ্বোধন ও মোড়ক উন্মোচন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই দুঃখ প্রকাশ করেন। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলছেন, ‘১৫ জানুয়ারি’ আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলছেন, ‘৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই দেওয়া যাবে।’ আমি কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো কমিটমেন্ট দেব না। পাঠ্যবই কবে ছাপা শেষ হবে, তা নিয়ে আমি কিছু বলব না। বই ছাপার প্রক্রিয়াটা সম্পর্কে কিছু কথা বলব। আমি মনে করি, ‘পাঠ্যবই ছাপার কাজটা এবার শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মতো হয়েছে।’

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘প্রথম সমস্যাটা হলো, আমরা বিদেশে বই ছাপাব না। তারপর শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে অনিবার্য কারণে, তাতে বইয়ের সংখ্যা বেড়েছে। যখন কাজ শুরু করা হয়েছিল, সেটা অনেক দেরিতে হয়েছে। অনেকগুলো বই পরিমার্জন করতে হয়েছে।’ পরিমার্জন বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনীতিতে নিরপেক্ষ বলে কিছু থাকে না, দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষ সবকিছু যেন বইয়ে থাকে, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।’ বই ছাপার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘শিশুদের কাছে বই যাবে, সেটা ভালো কাগজে ছাপা না হলে তো হয় না। সেজন্য উন্নতমানের ছাপা, উন্নতমানের কাগজ ও মলাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া এনসিটিবিতে আগে যারা কাজ করেছেন, তাদের অনেককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাদের বসানো হয়েছে, তারা অনভিজ্ঞ। কিন্তু মুদ্রণশিল্প সমিতির যে নেতা, তাদের সঙ্গে কীভাবে বোঝাপড়াটা করতে হয়, এটা তাদের অভিজ্ঞতায় নেই। সেটা করতে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমাকেও এর মধ্যে ঢুকতে হয়েছে।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘কাগজের মান ঠিক রাখা এবং আমাদের বই ছাপানোর কাজ বাদ দিয়ে যাতে নোট বইয়ের ছাপার কাজ না হয়, সে বিষয় তদারকির জন্য ঢাকার শিক্ষকদের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার টিমের মাধ্যমেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।’ শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘বই ছাপানোর কাজে পদে পদে ষড়যন্ত্র ছিল, যা অতিক্রম করা হয়েছে। আজও (বুধবার) কোনো কোনো জেলায় ষড়যন্ত্র করে বই আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। বই ছাপানোর কাজে অনেক প্রেসের মালিক, কাগজ উৎপাদনকারী সংস্থা বর্তমানের কম মূল্যে কাগজ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই। এখনই সব বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছাতে না পেরে আমি কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এবং তাদের অভিভাবকদের প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখ প্রকাশ করছি। সান্ত্বনা এতটুকুই বইগুলো আগের চেয়ে সুন্দর হবে এবং বছরের মাঝখানে মলাট ছিঁড়ে যাবে না।’ তিনি বলেন, গল্পের একেবারে শেষে না গিয়ে যেমন ষড়যন্ত্রকারীকে বোঝা যায় না, এখানেও তেমন। সেটা সরকারের কেউ হোক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হোক, এনসিটিবির হোক, মজুতদার হোক, সিন্ডিকেট হোক। মানে যে কেউ হতে পারে। তবে এখনই আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। এ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আমরা একচেটিয়া ব্যবসা কমিয়ে আনব। এটা আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমি, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

সব শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্শন উদ্বোধন :বিনা মূল্যে পাঠ্যবইয়ের পরিমার্জিত অনলাইন ভার্শন উদ্বোধন করা হয়েছে। সব শ্রেণির পূর্ণাঙ্গ বই এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে এ বই ডাউনলোড করে পড়তে পারবেন। বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে (আমাই) বইয়ের অনলাইন ভার্শন উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অবসর সুবিধা দিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারে ইলেকট্রনিক্স ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) কার্যক্রমও উদ্বোধন করা হয়।