নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (টিআর) ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর বাজারে একটি দুই কক্ষ বিশিষ্ট পাবলিক টয়লেট নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয় দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা। প্রায় চার বছর আগে এই টাকা বরাদ্দ হলে তখনই পুরো টাকাই উত্তোলন করেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। পরে আংশিক কাজ করে বাকি প্রায় দুই লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে।
ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ডের কাছেই একটি বাড়িতে যাওয়ার প্রবেশপথেই অসমাপ্ত টয়লেটটির দেখা মিলে। এলাকাবাসী জানান, গত প্রায় চার বছর আগে এই টয়লেটটি তৈরি করেন রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ৮-১০দিন কাজ করে একটি অবকাঠামো তৈরি করে ছাউনি না দিয়ে এবং ব্যবহার উপযোগী না করেই কাজ শেষ করেন তিনি। পরে এটি বছরের পর বছর অব্যবহৃত থেকে বর্তমানে পরিত্যক্ত।
রামগোপালপুর বাজারের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আকন্দ বলেন, আমি টয়লেটটি করার জন্যে জায়গা দিয়েছি কিন্তু কাজ অসম্পন্ন রেখেই টাকা উত্তলন করেছে। আমি চেয়ারম্যানকে কাজ টি শেষ করার কথা বললে তিনি আমাকে টয়লেটের টিন গুলো লাগিয়ে ফেলতে বলে। কিন্তু সরকারি কাজের টয়লেটে আমি কেন টাকা খরচ করব? যারা এই টাকা গুলো লুটপাট করেছে তাদের দৃষ্টান্ত শাস্তি চাই।
রামগোপালপুর বাজারের দোকানী আশিকুল ইসলাম জানান, বাজারের সবাই মসজিদের টয়লেটটি ব্যবহার করে এতে খুব চাপ সৃষ্টি হয়। সরকারি টয়লেটটি আমার দোকানের পাশেই কিন্তু আজ পর্যন্ত ব্যবহার উপযোগী হয়নি বলে যেটুকু নির্মাণ করেছিল সেটাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাশের বাড়ির মালিক জালাল উদ্দিন জানান, তার চোখের সামনেই নামকাওয়াস্তে এই কাজটি করেছেন চেয়ারম্যান। কাজ শেষ না করেই ফেলে রাখায় এখন সব নষ্ট হয়ে গেছে। টাকা আত্মসাতের ঘটনায় বাসস্ট্যান্ড ও বাজারের লোকজনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর তদন্ত করে বিচারের প্রয়োজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (টিআর) থেকে (২য় পর্যায়) উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের ‘রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ডে দুই কক্ষ বিশিষ্ট পাবলিক ল্যাট্রিন নির্মাণ’ নামের একটি প্রকল্প দেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের চেয়ারম্যান হন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনিই ২০২১ সালের শেষের দিকে কাজটি শুরু করেন।
সর্বোচ্চ ১০ দিন কাজ করে আট ফুট উচ্চতা ও ১০ ফুট প্রস্থের দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ফাউন্ডেশন দাঁড় করানো হয়। এই কাজটি করেন রাজমিস্ত্রী মাহবুব।
ওই রাজমিস্ত্রী জানান, প্রতিদিন প্রায় এক হাজার টাকা মজুরিতে তিনি আট দিন কাজটি করেছেন। এই কাজে মোট ব্যবহার হয়েছে ১২শ ইট, ১৩ বস্তা সিমেন্ট, দুই ট্রলি বালু, দুটি প্লাস্টিকের দড়জা, ১৪ ফুট পাইপ, দুটি সাইফেন, দুটি কমোড ও আটটি চাক। ওপরের ছাউনি দেওয়া ছাড়াই কাজ শেষ করা হয়। তিনি আরও জানান, এই কাজে সর্বোচ্চ খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। অথচ টিআরের তালিকা থেকে জানা যায়, এ কাজে বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল আমীন জনি’র সাথে কথা বলতে চাইলে উনার মোবাইল নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সোহেল রানা বলেন, আমি এখন ঢাকা আছি, ঢাকা থেকে ফিরে আপনার সাথে কথা বলব।
গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. শাকিল আহমেদ জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।