বার্তা ডেস্ক: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা ধরে রাখতে আরও এক ধাপ এগোল বাংলাদেশ। আজ সেমিফাইনালে ভুটানকে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
শিরোপা ধরে রাখতে আর মাত্র এক জয় দরকার তাদের। আজ নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামের ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেছেন আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা তহুরা খাতুন। জোড়া গোল করেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। এছাড়া একটি করে গোল করেছেন ঋতুপর্ণা চাকমা এবং মাসুরা পারভিন।
খেলার তৃতীয় মিনিটেই ভালো আক্রমণ শানায় বাংলাদেশ। তবে সাবিনার ক্রস থেকে শট গোলে রাখতে পারেননি তহুরা খাতুন। চতুর্থ মিনিটে প্রথম কর্নার পায় বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে ফায়দা তুলে নিতে পারেনি তারা। ষষ্ঠ মিনিটে সাগরিকার শট আটকে দেন ভুটানি ডিফেন্ডাররা। তবে বাংলাদেশকে বেশিক্ষণ আটকে রাখা যায়নি।
সপ্তম মিনিটে ডেডলক ভাঙেন ঋতুপর্ণা চাকমা। আগের দুই ম্যাচে গোল না পেলেও সেমিতে এসে ম্যাচের শুরুতেই জালের নাগাল পান অভিজ্ঞ এই ফরোয়ার্ড। বক্সের সামনে থেকে লেফট উইংয়ে ঋতুকে পাস দেন মাসুরা পারভীন। বাঁ পায়ের জোরালো ও দূরপাল্লার শটে সরাসরি বক্স কাঁপান ঋতু। তার দুর্দান্ত শটের জবাব ছিল না ভুটানের গোলরক্ষক সংগীতা মঙ্গার কাছে। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বল আটকানোর চেষ্টা করেও নাগাল পাননি তিনি। এবারের টুর্নামেন্টে এটি ঋতুর প্রথম গোল।
খেলার ১২ মিনিটে লিড দ্বিগুণের সুযোগ আসে বাংলাদেশের সামনে। তবে সাগরিকাকে গোলবঞ্চিত করেন ভুটানের ডিফেন্ডার দোরজিয়েদন। বাম প্রান্ত দিয়ে ভুটানি সীমানায় ঢুকে পড়েন ঋতু। দারুণ ক্রসে বল দেন বক্সের ডানপ্রান্তে থাকা সাগরিকাকে। তরুণ এই স্ট্রাইকার হেড নিলে বল জাল খুঁজে নিচ্ছিল। তবে শেষ মুহূর্তে গোললাইন ক্লিয়ারেন্সের মাধ্যমে ভুটানকে বিপদমুক্ত করেন দোরজিয়েদন।
তিনি মিনিট পরই লিড দ্বিগুণ করেন তহুরা। ডিফেন্ডার শিউলি আজিমের অ্যাসিস্টে বক্সের সামনে থেকে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন ভারতের বিপক্ষে জোড়া গোল করা তহুরা। প্রতিযোগিতায় এটি তার তৃতীয় গোল।
খেলার ১৮ মিনিটে গোল পরিশোধের ভালো সুযোগ হারায় ভুটান। থ্রু পাস পেয়ে শট নিতে ব্যর্থ হন পেমা চদান শেরিং। প্রথমে বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপনা বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ফাঁকা পোস্টে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি দেকি লাজম। বক্সের ডানপাশ ঘেঁষে বল বেরিয়ে যায়।
খেলার ২৫ মিনিটে গোল মিস করে বাংলাদেশ। রুপনার গোলকিক মাঝমাঠে পান সাবিনা খাতুন। কয়েকজনকে কাটিয়ে এই ফরোয়ার্ড শট নেন পোস্টের দিকে; বল বারে লেগে ফিরে এলে গোলবঞ্চিত হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে পরের মিনিটেই আক্ষেপ ঘোচান সাবিনা। মাঝমাঠ থেকে ভুটানের এক খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে আরেক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের ডান দিক থেকে সাবিনাকে ক্রস দেন মনিকা চাকমা। গোলমুখ থেকে আলতো টোকায় জালে বল জড়ান অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড সাবিনা। এবারের সাফে এটি সাবিনার প্রথম গোল।
৩৮ মিনিটে চিপশটে বক্সের বাইরে থেকে গোল করনে তহুরা। ততে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় ৪-০ ব্যবধানে। ম্যাচে এটি তহুরার দ্বিতীয় গোল, প্রতিযোগিতায় চতুর্থ। দুই মিনিট পর লিড ৫-০ করেন সাবিনা। রুপনার গোলকিক থেকে মাঝমাঠে বল পান সাবিনা। সেখান থেকে ভুটানের কয়েকজনকে কাটানোর পর গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে ফাকা গোল কাঁপান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
৪১ মিনিটে এক গোল ফেরত দেয় ভুটান। বক্সের ডানপ্রান্ত থেকে সতীর্থের ক্রস থেকে প্লেসিং শটে রুপনার পায়ের নিচ দিয়ে বলে জাল জড়ান দেকি লাজম। প্রথমার্ধে ৫-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।
বিরতির পর ফিরে খেলার ৫৮ মিনিটে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন তহুরা। বাংলাদেশ লিড নেয় ৬-১ গোলের। মনিকার থ্রু পাস থেকে গোলমুখে ভুটানি গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তহুরা। এবারের টুর্নামেন্টে এ নিয়ে পাঁচ গোল হলো তহুরার। পরের মিনিটে আক্রমণে ওঠে ভুটান। তবে লাল-সবুজের ডিফেন্ডাররা ছিলেন প্রস্তুত।
৬২ মিনিটে তিন পরিবর্তন আনেন বাংলাদেশে কোচ পিটার বাটলার। ঋতু, সাগরিকা ও সাবিনাকে তুলে মাঠে নামান স্বপ্না রানী, সানজিদা আক্তার ও শাহেদা আক্তার রিপাকে। বদলি নেমে অবশ্য প্রথম সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি স্বপ্না। ৬৮ মিনিটে রক্ষণচেরা পাসে বল পেয়ে যান তিনি। কিন্তু গোলে শট নেওয়ার আগে জটলায় পড়ে যান স্বপ্না। গোলের সুযোগ হারায় বাংলাদেশ।
তবে আরেক বদলি সানজিদার কর্নার কিকে খেলার ৭২ মিনিটে লিড বাড়ায় বাংলাদেশ; গোলমুখের সামনে থেকে হেডে বক্স কাঁপান মাসুরা। এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথম গোল পেলেন সাফজয়ী এই অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার। গোল পাওয়ার খানিক পরেই মাসুরাকে তুলে কোহাসি কিসকুকে মাঠে নামান কোচ।
কয়েক মিনিট পর মারিয়া মান্ডাকে তুলে সুমাইয়া মাতসুশিমাকেও মাঠে নামান পিটার বাটলার। খেলার ৮৭ মিনিটে দারুণ শটে একটুর জন্য গোল পাননি এই ফরোয়ার্ড। বক্সের সামনে থেকে তার নেওয়া জোরালো শট যায় বক্সের সামান্য উপর দিয়ে।