Durnitibarta.com
ঢাকাবুধবার , ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আমার দেখা একজন খায়রুল আলম রফিক

প্রতিবেদক
Mym Office
সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৪ ৪:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি, এ জীবন মন সকলি দাও।
তার মত সুখ কোথাও কি আছে? আপনার কথা ভুলিয়া যাও।”

ব্যক্তিগত দুঃখ সন্তাপে হা-হুতাশ না করে বরং নিজের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে পরের উপকার করার মাধ্যমেই প্রকৃত সুখ নিহিত। মানব জীবন ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক নয়, একে অন্যের কল্যানে ব্রতী হওয়াই মনুষত্বের পরিচয়। হ্যাঁ সেই মনুষত্বের পরিচয় বহন করে আসছে এমন একজন ব্যাক্তির কথা আমি আজ বলতে যাচ্ছি। যাকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। তার নাম খায়রুল আলম রফিক। যিনি একাধীক প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক হওয়া স্বত্বেও এখনো কাজ করেন মফস্বল সাংবাদিকদের মত। তিনি গণমানুষের সঙ্গে মিশে একজন ভুক্তভোগীর হাঁড়ির ভেতরের খবর পর্যন্ত বের করে নিয়ে আসেন। যে কারণে তিনি নাগরিক সাংবাদিকের খেতাবও পেয়েছেন।

তিনি কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেন নি। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দেশের যেখানেই কোন গণমাধ্যম কর্মী বিপদে পড়ার খবর পান, তখনই তিনি ছুটে চলে যান তার কাছে। নিজের চিন্তা না করে মরিয়া হয়ে উঠেন কিভাবে উদ্ধার করা যায় সেই গণমাধ্যমকর্মীকে। যেখানেই অন্যায় অবিচার হবে তিনি শুনা মাত্রই লেগে পড়েন সেই তথ্য উদঘাটনে। অন্যায়কে কখনো তিনি প্রশ্রয় দেননি। যে কারণে তিনি বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সত্য লিখতে গিয়ে তিনি ৩বার কারাগারে গিয়েছেন। চোখ বাধা অবস্থায় ছবি তুলে এবং বিবস্ত্র’ করে ভিডিও ধারণ’ করে তাকে অমানুষিকভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এমনকি তাকে ক্রসফায়ারে’র চেষ্টাও করা হয়। তবুও থেমে থাকেনি তার কলম। গত ৮ বছরে তিনি সরকারদলীয় মন্ত্রী এমপিদের বিরুদ্ধে ৩৪৫ টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছেন। মাদক সম্রাটদের বিরুদ্ধে ১২৩ টি রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন তিনি ৫ বছরে। তার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা হয়েছে ১১ টি। কিন্তু একটি মামলাও প্রমানীত হয়নি। কারাগার থেকে বের হয়ে আবারও ছুটে চলেন সত্য অনুসন্ধানে।

দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের প্রধান সম্পাদক মো. খায়রুল আলম রফিক দেশের যে কোন জায়গায় নির্যাতিত নিপীড়িত সাংবাদিক ও গরিব দুঃখি, এতিম-অনাথ, অসহায় মানুষের পাশে থেকে আজীবন কাজ করতে তিনি গড়ে তুলেন বাংলাদেশ মানবতা ফাউন্ডেশন।

বিভিন্ন জায়গায় অসহায়দের তিনি করে দিয়েছেন ১১টি ঘর, শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরকে এ পর্যন্ত ৮২টি হুইল চেয়ার, ১৭৯টি টিউবওয়েল ও কিশোরগঞ্জের তাড়াইলে ভৈয়ারকোণা জামে মসজিদে এবং গৌরীপুরের রামগোপালপুর জামে মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে ৪টি সাব-মারসিবল পাম্পসহ ওজুখানা করে দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৬ জন এতিম মেয়েকে তিনি বিয়ে দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। প্রতিবন্ধী ও শিকলে বাঁধা ২৫ জন অসহায় মানুষকে চিকিৎসা করিয়েছেন তিনি। এসব কর্মকাণ্ড ফেইসবুক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর থেকে তাকে কেউ কেউ মানবতার ফেরিওয়ালা উপাধি প্রদান করেছেন।

অনলাইন গনমাধ্যমের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে তিনি গড়ে তুলেন বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক)। সারাদেশে আহত ও খুন হওয়া ৩৩ সাংবাদিক পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই সাংবাদিক নেতা মো. খায়রুল আলম রফিক। নিজ অর্থায়নে তিনি ৬৫ জনকে আইসিটি মামলা থেকে জামিন করিয়েছেন। কক্সবাজারের নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান মিথ্যা ও সাজানো ৭টি অস্ত্র মামলায় কারামুক্ত করতে আন্দোলন শুরু করেন খায়রুল আলম রফিক। এরপরে দেশজুড়ে আরও নানা নির্যাতিত সাংবাদিকের পাশে দাঁড়ান তিনি।

নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম গ্রহণ করা খায়রুল আলম রফিক পরিবার নিয়ে বসবাস করেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে। ময়মনসিংহ বিভাগের সাংবাদিকতার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তার নাম। সবার পরিচিত মুখ। তবে অন্য দশজন সাংবাদিকের চেয়ে তিনি আলাদা। সাংবাদিকতার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, দায়িত্ব, সততা ও সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা অন্যদের চেয়ে তাকে আলাদা করেছে। দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয়েও বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশে এখনও অঙ্গীকারবদ্ধ তিনি। ময়মনসিংহের সাংবাদিকদের নিয়ে গড়ে তুলেন “ময়মনসিংহ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন”। ময়মনসিংহের সাংবাদিকরা লাঞ্চিত, নির্যাতিত বা অধিকার বঞ্চিত হলে তিনি “ময়মনসিংহ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন” নিয়ে মাঠে নেমে পড়েন।

সংবাদিকতার প্রতিটি স্তরেই ছড়িয়ে রয়েছে তার কৃতিত্ব। সাংবাদিকতার স্বীকৃতিতে বিভিন্ন পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। সম্পাদনায় খায়রুল আলম রফিকের পরিচিতির জগৎ স্বাভাবিকভাবেই বিস্তৃত। তিনি সারা বাংলাদেশের সকল সাংবাদিকদের একত্র করার লক্ষ্য নিয়ে তৈরি করেছিলেন এক বিশাল কমিউনিটি। যার নাম বাংলাদেশ অনলাইন সাংবাদিক কল্যান ইউনিয়ন (বসকো)। দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪ টি জেলাসহ প্রায় ৩৫০ টি উপজেলায় কমিটির মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলেন এক সুসংগঠিত সংগঠন। সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকদের জন্য এতোকিছু করলেও বাস্তব জীবনে তিনি বাড়ি-গাড়ি-সংসার বিষয়ে চরম উদাসীন।

সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক মনে করেন- পৃথিবীর কল্যাণকামী সব পেশা মহৎ হলেও সাংবাদিকতা পেশা সবার ঊর্ধ্বে। এটাকে পেশা বলা চলে না; মানবসেবা বলাই শ্রেয়। এই সেবায় সততা, বস্তুনিষ্ঠতা ও নিরপেক্ষতা মূল হাতিয়ার। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয় নির্যাতিত-শোষিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের কথা। সৎ সাংবাদিকতা সমাজকে কলুষমুক্ত করে আর সভ্যতাকে করে আলোকিত।

লেখক : খাইরুল ইসলাম আল আমিন
প্রকাশক, দুর্নীতি বার্তা ডটকম
সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক)