Durnitibarta.com
ঢাকারবিবার , ২১ আগস্ট ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গৌরীপুরে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড নবায়ন করতে লাগছে ৫০০ টাকা

প্রতিবেদক
Mym Office
আগস্ট ২১, ২০২২ ৬:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা কেজি চালের কার্ডের জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে নিচ্ছেন এক ইউপি সদস্য। হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের জন্য বিনা পয়সায় এসব কার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও কার্ড নবায়নে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২ নম্বর গৌরীপুর ইউনিয়নের বেকারকান্দা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. আবু বকর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে ২ নম্বর গৌরীপুর ইউনিয়নের বেকার কান্দা গ্রামে গেলে এমন অভিযোগ কার্ডধারী হতদরিদ্ররা। তাদের অভিযোগ, ৫০০ টাকা দিলেই ইউপি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক কার্ড সই করেন। টাকা দিতে না পারলে সই করেন না তিনি। কার্ড না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

বেকারকান্দা গ্রামের বছির উদ্দিনের ছেলে শ্রমিক মো. শহিদ মিয়া বলেন, সিদ্দিক মেম্বারের কাছে কার্ড নিয়ে গেছি সই করানোর জন্য। তবে, তিনি সই না করে বলেন, আমাদের একটা মিটিং আছে। মিটিং করে পরে সই করব। ওই দিন আমি চলে আসি। পরে আবার কার্ড নিয়ে গেলে তিনি বলেন, কার্ড নিলে ৫০০ টাকা লাগব, কম হবে না। আমি গরিব অসুস্থ মানুষ টাকা কিভাবে দেব। কিন্তু, সে আমার কোন কথাই শুনল না, ৫০০ টাকা দেয়ার পরেই তিনি কার্ডে সই দিয়েছেন। পরে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে সই নিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে অনলাইনে কার্ড করতে বলেন।

একই গ্রামের করনেস মিয়ার স্ত্রী রিপা বলেন, সিদ্দিক মেম্বার কইছে ৫০০ টাকা দিলে নতুন কার্ড হবে। না হলে কার্ড বাতিল হয়ে যাবে। পরে ৫০০ টাকা মেম্বারকে দিলেই তিনি কার্ডে সই করেছেন। পরে আরও ১০০ টাকা দিয়ে অনলাইন করছি।

মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে মো. নুর নবী বলেন, চালের কার্ড নতুন করে করতে গেলে মেম্বার টাকা ছাড়া সই করে না। পরে আমি ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে সই করেন। এসময় আমি ৫০ টাকা ফেরত চাইলে তাও তিনি দেন। উল্টো বলেন, ৫০০ টাকার নিচে হবে না।

ওই গ্রামের মৃত গুনজর আলীর ছেলে আবুল কাশেম বলেন, সিদ্দিক মেম্বার কার্ড করার জন্য আমার কাছে এক হাজার টাকা চাইছে। পরে অনেক বলে অনুরোধ করে ৫০০ টাকা দিলেই তিনি কার্ডে সই করছেন।

আব্দুল কদ্দুস ছেলে মো. ইছাক মিয়া বলেন, প্রথমে কার্ড নিয়ে এক আত্মীয়’র কাছে গিয়েছি। সে ফোন করে আমার কার্ড করে দেয়ার কথা বলেন। পরে আমি মেম্বারের কাছে যাই। মেম্বারের কাছে গেলে আমার কাছে ৫০০ টাকা চাইলে। টাকা না দিলে কার্ড হবে না বলে জানায় মেম্বার। আমি বলছি, টাকা লাগবে কেন? মেম্বার বলেন, খরচ আছে তাই ৫০০ টাকা লাগবে। টাকা দিলেই মেম্বার সই করেছেন।

ওই ইউনিয়নের সাবেক আনসার কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমি ৪০ বছর এই ইউনিয়নের আনসার কমান্ডার ছিলাম। আমি ধার করে ৫০০ টাকা নিয়ে গেছি। সে আমার কাছ থেকে জোড় করে ৫০০ টাকা রাখছে।

তিনি আরও বলেন, আমি ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড নবায়ন করতে গেছি। মেম্বার আমার কাছে ৫০০ চাইছে। আমি তো জানি ৫০০ টাকা লাগে। পরে প্রতিবেশির কাছে ৫০০ টাকা ঋন করে তাকে দিয়েছি। তবেই সে কার্ড সই করেছেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, নির্বাচনে যারা আমার বিরোধিতা করেছেন। তারাই এসব মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে হয়রানি করার জন্য এমন করছেন। যারা কার্ডধারী তারা এমন কথা বলতে পারবেন না।

কার্ডধারীরা এমন অভিযোগ কেন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা অভিযোগ করেছেন।

এবিষয়ে ২ নম্বর গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হজরত আলী বলেন, কার্ড করার জন্য কোন টাকা লাগে না। যদি নিয়ে থাকে তাহলে টাকা ফেরত দিতে বলব। আপনি যদি গৌরীপুর আসেন, আমার নাম্বারে ফোন করে দেখা করবেন। একসাথে চা খাব।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, বিষয়টি আমিও শুনেছি। ৩ জন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে। তারা হলেন আবু বকর সিদ্দিক, ওয়াসিম ও রিয়াদ মেম্বার। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণীত হলে প্রয়োজনীয়  ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান মারুফ বলেন, এখন কার্ডে মেম্বারের কোন সাক্ষর লাগে না। তাছাড়া, টাকা নেয়ার কথা না। তারপরেও যদি সে টাকা নিয়ে থাকে। তাহলে,  ভুক্তভুরীরা অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।