Durnitibarta.com
ঢাকাবুধবার , ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বন্যায় ধসে পড়েছে বিদ্যালয়, গাছের ছায়ায় চলছে লেখাপড়া

প্রতিবেদক
বার্তা বিভাগ
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪ ৬:০৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বার্তা ডেস্ক:  বন্যায় ধসে পড়েছে ছকাবাছড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বেঞ্চ, চেয়ারসহ বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও। বিদ্যালয়টি ধসে গেলেও দুর্গম এলাকার এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ক্লাস করছে পাড়ার চারটি স্থানে গাছের ছায়ায়।

দীঘিনালা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মেরুং বাজার। মেরুং বাজার থেকে ৪০ মিনিট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যেতে হয় দীঘিনালা উপজেলার ছকাবাছড়া এলাকায়। গতকাল মঙ্গলবার সকালে যেখানে গিয়ে দেখা যায়, মাইনী নদীর পাড়ে বাঁশ আর টিনের তৈরি ছকাবাছড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ধসে পড়েছে পুরোপুরি। বিদ্যালয়ের চারপাশ দেখলে বোঝার উপায় নেই এখানে বিদ্যালয় ছিল। বিদ্যালয়ের চারপাশে যত দূর চোখ যায় শুধু বালুচর। ওই অবস্থায় স্কুলের পাশে একটি গাছের ছায়ায় মাদুর বিছিয়ে কয়েকজন বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক।

পাড়ার ৫ কিলোমিটারের মধ্যে বিধ্বস্ত বিদ্যালয়টি ছাড়া আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১ জন। তার মধ্যে ২৬ ছাত্রী আর ২৫ জন ছাত্র। তাদের সবারই লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পাড়াবাসী জানান, ছকাবাছড়া থেকে সবচেয়ে কাছে যে বিদ্যালয়টি, সেখানে যেতে হয় বেশ কয়েকটি পাহাড় আর দুটি ছড়া ও মাইনী নদী পার হয়ে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে উপজেলা শহরে গিয়ে পড়ালেখা করে। তবে গ্রামের অধিকাংশ ছেলেমেয়ের অত দূরে গিয়ে বিদ্যালয়ে যায় না, তা ছাড়া পাড়ার সঙ্গে মেরুং বাজার পর্যন্ত সরাসরি কোনো সংযোগ সড়ক নেই। শুধু সাপ্তাহিক হাটের দিন বর্ষার বছরে চার মাস ছোট ছোট ইঞ্জিন নৌকা চলে। অন্য সময় তাদের মেরুং আসতে হয় হেঁটে মাইনী নদীর পাড় ঘেঁষে। তাই সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষার কথা চিন্তা করে পাড়ার সবার প্রচেষ্টায় ২০১০ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পর থেকে চারজন শিক্ষক মিলে বিনা বেতনে পড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের।

বন্যায় বিদ্যালয়ের বেঞ্চসহ যাবতীয় সব আসবারপত্র ভাসিয়ে নিয়ে যায় বলে জানান সহকারী শিক্ষক পলাশ চাকমা। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এক সপ্তাহ আগে পাড়ায় তাঁরা চারটি স্থান নির্ধারণ করেন। চারজন শিক্ষক চার ভাগ হয়ে চার জায়গায় কোনোমতে শিক্ষার্থীদের দুই-তিন ঘণ্টা পড়ানোর চেষ্টা করছেন।

বন্যায় বিধ্বস্ত স্কুলঘরের আসবাব থেকে শুরু করে সবকিছুই ভেসে গেছে
বন্যায় বিধ্বস্ত স্কুলঘরের আসবাব থেকে শুরু করে সবকিছুই ভেসে গেছেছবি: সংগৃহীত
পাড়ার বাসিন্দা নমিতা চাকমার দুই সন্তান এ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। তিনি বলেন, ‘বন্যার পর থেকে পরিবেশ অন্য রকম হয়ে গেছে। এখন শিক্ষকেরা গাছের নিচে কিংবা কারও বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেটের মতো করে পড়াচ্ছেন। কিন্তু কত দিন পর্যন্ত এভাবে পড়াতে পারবেন। বিদ্যালয়টি নতুনভাবে নির্মাণ করাটা খুবই জরুরি। কেউ যদি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে প্রয়োজনে আমরা এলাকাবাসী শ্রম দেব।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টানেল চাকমা জানেন না কীভাবে আবার বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণ করা যাবে। তবে এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর সদিচ্ছার কথা জানালেন তিনি। বলেন, ‘পাঁচ কক্ষের বিদ্যালয়টি চার বছর আগে মেরামত করেছি এলাকাবাসীর সহায়তায়। এখান আর এ জায়গায় বিদ্যালয় তোলা সম্ভব নয়। বিদ্যালয়ের জায়গা এখন বালুচর হয়ে গেছে। এ হাত নিচেও বালু পাওয়া যায়। এলাকাবাসী বলেছেন, নতুনভাবে বিদ্যালয় তুলতে হলে প্রয়োজনে টিলার ওপর তাঁরা জমি দান করবেন।’

এলাকার কারবারি জ্যোতির্ময় চাকমা বলেন, ‘আগে কেউ পাড়ার পড়ালেখা করত না। পাড়ার এখনো পর্যন্ত কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ দেখেনি। তবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এলাকার সবাই বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। এলাকা থেকে এখন বেশ কয়েকজন কলেজে পড়ছে। তবে বন্যার পর এখন সবার অবস্থা একই। নিজেদের বাড়ি মেরামত করবে নাকি স্কুল নতুন করে তৈরি করবে। অনেক পরিবারের খাবার এবং থাকার জায়গাও নেই। স্কুল ওঠানো এখন এলাকাবাসীর কাছে স্বপ্নের ব্যাপার। কোনো সংস্থা কিংবা সরকার যদি বিদ্যালয়টি তুলে দেয় তাহলে আমাদের এলাকার বাচ্চারা পড়ালেখার সুযোগ পাবে।’

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ দুর্গম এলাকাটিতে নিজে গিয়ে বিদ্যালয়টি দেখে এসেছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, ‘যদি বিদ্যালয়টি গ্রামবাসী নতুনভাবে তুলতে চায়, তবে আমি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢেউটিন দিয়ে সহযোগিতা করতে পারি।’