নিজস্ব প্রতিবেদক : ভয়ংকর সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে ‘কিশোর গ্যাং’এর সদস্যরা। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, নারীদের উত্ত্যক্ত করা, বাসা- বাড়িতে গিয়ে হুমকিসহ সব ধরনের অপরাধে ‘কিশোর গ্যাং’এর নাম আসছে। এসব বাহিনীর সদস্যদের বেশির ভাগই ১৮ বছরের বেশি বয়সী।
কিশোর গ্যাংদের তৎপরতা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন করেছেন প্রতিদিনের কাগজ । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন ময়মনসিংহে ৩৪ টির মতো ‘কিশোর গ্যাং’ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহ নগরী, ত্রিশাল ও ভালুকায়। এসব গ্যাংয়ের (অপরাধী দল) সদস্য ৫৫০ জন। ঢাকার পর ময়মনসিংহে রয়েছে ৩৪টি। এসব দলের সঙ্গে জড়িত ৫৫০ জন।
কিশোর গ্যাং সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ নগরী ও ত্রিশালের পৌর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে এসব গ্যাংয়ের সদস্যরা গ্রেফতার হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে গডফাদাররা (পৃষ্ঠপোষকেরা)। কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের তথা নেপথ্যের শক্তির বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
‘হিরোইজমের’ চিন্তাভাবনা থেকে কিশোরদের মধ্যে ‘গ্যাং’ কালচার শুরু হলেও তারা এখন ভয়ংকর সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক দলের বড় ভাইদের আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়ার ফলে কিশোরেরা নিজেদের ‘পাওয়ারফুল’ (ক্ষমতাবান) মনে করে এবং সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
ময়মনসিংহ পুলিশ সূত্র বলছে, ২০২৩ সালে ময়মনসিংহ যত খুন হয়েছে, তার ৯ টি কিশোর গ্যাং-সংশ্লিষ্ট। এর অর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন গ্যাংয়ের সদস্যরা নিজ এলাকায় প্রভাব বাড়াতে এক পক্ষ আরেক পক্ষের সঙ্গে ভয়ংকর সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।
কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা রোধে নয়া পুলিশ সুপার আজিজুল ইসলাম বিভিন্ন থানার ওসিদের নির্দেশনা দেন । যোগদান করেই মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি বলেন, যে ওসির থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সরকারি সংস্থার বিশেষ প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে শুধু জিপিএ-৫ পাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সন্তানদের ব্যস্ত না রেখে পড়ালেখার বাইরেও খেলাধুলা, নাটক, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, স্কাউটিংয়ের মতো সুস্থ বিনোদনমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে তাদের আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করা। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) প্রবেশ নিশ্চিত করা এবং কিশোরদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে; এমন অ্যাপগুলো চিহ্নিত করে বন্ধ করে দেওয়া। পাড়া-মহল্লাভিত্তিক তালিকা তৈরি করে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রাখা এবং কিশোর গ্যাংয়ের ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া। জুমার নামাজে খুতবায় কিশোর গ্যাংয়ের কুফল এবং ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে নিয়মিত বয়ানের পদক্ষেপ নেয়া। কিশোর সংশোধনাগারের পরিবেশ শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সহায়ক হওয়া। সংশোধনাগারে যেন মানসিক নির্যাতন ও টর্চার সেলে পরিণত না হয়, সে দিকে লক্ষ রাখা।
আরো বলা হয়েছে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মোটরসাইকেল রেস (গতির লড়াই) করে, এ বিষয়ে ট্রাফিক সার্জেন্টরা ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিশোর গ্যাং সৃষ্টির কারণ ও উত্তরণের উপায় নিয়ে সমাজবিজ্ঞানী ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গবেষণা করা প্রয়োজন।
সাধারণ মানুষের দাবি, সেনাবাহিনী অভিযানে এসব কিশোর গ্যাং আটক করলেই অপরাধ কমে যাবে।