স্টাফ রিপোর্টার :
‘আমি সন্তান নিয়ে স্বামী’র ওপর হামলাকারীদের বিচারের জন্য আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি, একটি ভালো কাজ করতে গিয়ে এমন পরিণতি হবে তা কখনো ভাবতে পারি না। আমার স্বামী মাদকের বিরুদ্ধে ছিলো,বালুঘাটের অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করায় ওদের বিরুদ্ধে লেখেছে। আমার স্বামীর তো কোনো দোষ ছিলো না, তাকে কেন এমনভাবে হাত-পা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হলো? সভ্য সমাজে তো এমনটা হওয়ার কথা নয়, আমার স্বামী হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছেন। একজন সাংবাদিকের স্ত্রী হিসাবে আমি জানি তিনি কতোটা কষ্ট করছেন, আমার পরিবার কতোটা আজকে অসহায়;অথচ যারা অপরাধী তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আরও ভয়-ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এসব বলেন কুষ্টিয়ার নির্যাতিত সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজু’র স্ত্রী টপি বিশ্বাস।
তিনি আরও বলেন, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ হামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নিয়ে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এভাবে আর যেনো কোনো সাংবাদিকের ওপর এমন হামলা না হয়, আমার মতো সন্তান নিয়ে একদিকে বিচার, অন্যদিকে স্বামীর চিকিৎসার জন্য ঘুরতে না হয়।
এ সময় রিজুর আড়াই বছরের পুত্র রায়েশ রহমান পৃথিবীও পিতার ওপর ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অস্পষ্ট ভাষায় বাবার আদর-স্নেহ বঞ্চিত শিশুটি আকুতি জানায়, দুষ্টলোকেরা আমার বাবাকে মেরেছে! ওদের বিচার চাই।
সারাদেশে অব্যাহত সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়ন, হামলা-মামলা বন্ধে জন্য সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর। তিনি বলেন,আগামী ৩ মাসের মধ্যে অর্থ্যাৎ ২৯ সেপ্টেম্বরের মাঝে মহান জাতীয় সংসদে সাংবাদিক সুরক্ষায় আইন পাাস করা না হলে সাংবাদিক সংগঠন সমূহের মাধ্যমে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে আরো বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ‘সাংবাদিক সুরক্ষা’ আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই, এটা করতেই হবে, নয়তো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করার মত আদৌ কোন পরিবেশ নেই। দুর্নীতি,অনিয়মসহ কারো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলা, মিথ্যা মামলার শিকার হতে হয়। এছাড়া কোন রকম বিচার ছাড়াই কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ চাঁদাবাজির মত স্পর্শকাতর মামলা কোন তদন্ত ছাড়াই রেকর্ড করে ফেলেন। এছাড়া সন্ত্রাসী, রাষ্ট্রীয় চোর, গুন্ডাপান্ডা দ্বারাতো অহরহ নির্যাতনের শিকার হতেই হচ্ছে। কোথাও পুলিশ পেন্ডিং মামলায়, কোথাও চুরি, ডাকাতি এমনকি ধর্ষণ মামলায়ও সাংবাদিকদের আসামি করে ঝাল মেটাচ্ছে। তাছাড়া পুলিশের দ্বারা সরাসরি হয়রানি, নির্যাতনের ঘটনাতো সবারই জানা। দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাওয়া হচ্ছে, সরকারকে সুরক্ষা দিতে সমস্যা কোথায়? সাংবাদিক সুরক্ষা আইন করলেতো আর তাদের বেতন দিতে হবে না। সাংবাদিকরা সম্মান চায়, তারা নিরাপত্তা চায়। তারাতো এই রাষ্ট্রেরই চতুর্থ স্তম্ভের একটি অংশ। রাষ্ট্রের অপরাপর স্তম্ভের সাথে জড়িত পিওন-চাপরাশিরও সুরক্ষা আইন আছে, সাংবাদিকদের থাকবেনা কেনো?সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএমএসএফ ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম মিরপুরী,কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক গাউছ উর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মুুরাদ, উপ-প্রচার সম্পাদক মো. রইছ উদ্দিন, শিক্ষা সম্পাদক নুরুল হুদা বাবু, কৃষি সম্পাদক শফিউল আলম, কেন্দ্রের সাবেক নেতা কাজী অহিদুজ্জামান, ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শাখা সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক মশিউর রহমান কাউসার, ফুলপুর শাখার সভাপতি মিজান আকন্দ, ঢাকার শ্যামপুর শাখা সভাপতি মনির হোসেন, সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেতা জামাল হোসেন। একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের মহাসচিব সুজন মাহমুদ। এছাড়াও একাত্ম প্রকাশ করেন গৌরীপুর বিএমএসএফের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বুরহান, হলি সিয়াম শ্রাবণ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রউফ দুদু, নির্বাহী সদস্য তাসাদদুল করিম, শামীম আনোয়ার, ফুলপুরের নির্বাহী সদস্য আল সাদি প্রমুখ।
উল্লেখ্য,সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় বিএমএসএফ'র জেলা সভাপতি, এশিয়ান টিভির স্টাফ রিপোর্টের ও স্থানীয় দৈনিক সত্য খবরের সম্পাদক নির্মোহ সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজুকে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে মোটর সাইকেল অবরোধ করে প্রকাশ্যে লোহার রড এবং হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দুই হাত, দুই পা ভেঙ্গে দেয়। বুক, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। যা চরম ন্যাক্কারজনক, নিন্দনীয়, বিভিষীকাময় দৃশ্য যে কেউ দেখলে রক্ত টগবগ করবে। কিন্তু অতীব দু:খ এবং পরিতাপের বিষয় এই যে গত ১৯ জুনের ঘটনায় ২০ জুন তার স্ত্রী বাদী হয়ে কুষ্টিয়া থানায় আশরাফুল ইসলাম শিপনকে প্রধান আসামী করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হলেও পুলিশ এজাহার ভুক্ত কোন আসামী গ্রেফতার না করে কৌশলে তাদেরকে জামিন নিতে সুযোগ করে দিয়েছেন। অথচ, সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রিজু এখন ঢাকা শ্যামলীতে ট্টমা সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে বিএমএসএফ'র কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা ও উপজেলা শাখা কমিটি নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করেন।
প্রকাশকঃ খাইরুল ইসলাম আল আমিন, প্রধান সম্পাদকঃ আবুল খায়ের, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৯৫ পাটবাজার (পুকুরপাড়), ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভা, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ , ওয়েবসাইট-www.durnitibarta.com, মোবাইলঃ 01710-492468, ইমেইল- [email protected]