ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ভাইয়ের ভিটাজমি নিজের জবরদখলে নিয়ে ভাবি শাহিদা বেগমকে ঘর ছাড়া করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ভাসুর বাবুল মিয়ার (৫০) বিরুদ্ধে। শাহিদা বেগম তার তিন মেয়েকে নিয়ে বতর্মানে বাপের বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। স্বামীর ভিটামাটি ফিরে পেতে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন শাহিদা বেগম (৪০)। তবুও কোন সুরাহা পাচ্ছেন না তিনি। এমন ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর পূর্বপাড়ায়। জানা যায়,ময়মনসিংহের খাগডহর পূর্বপাড়ায় বাসিন্দা হাফিজ উদ্দিন দীর্ঘদিন প্যারালাইসডে ভুগছিলেন। টাকা ও চিকিৎসার অভাবে অবশেষে তিনি মারা যান। অসুস্থ হয়ে নিজের চিকিৎসার জন্য ১৩ শতাংশ জমি বিক্রি করতে চাইলেও ছোট ভাই বাবুল মিয়ার বাধার মুখে পড়ে জমি বিক্রি করা হয়নি তার। উল্টো ভাইয়ের কাছে মামলা খেয়ে বসেন হাফিজ। সেই শোকে ও টাকার অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষে মারা যান তিনি। পরে ভূমি আইনে ২০১০ সালে ১৯ জানুয়ারি খাগডহর মৌজায় হেবা ঘোষনা পত্র দলিল মূল্যে জমির মালিক হয় শাহিদা বেগম। যার ডি.পি খতিয়ান নং -১২৬০,সাবেক হাল দাগ ১৮৫৪, হাল দাগ নং-৪২০৯। এদিকে মৃত্যুর আগে হাফিজ তার মেয়ে সন্তানদের নামে জমি লিখে না দেওয়ায় ওই জমির অংশিদার হয়ে ভাইয়ের ১৩ শতাংশ নিজের জবরদখলে নিয়ে নেই বাবুল। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও নির্যাতন করে ভাবিকে জমি থেকে বিতাড়িত করেন বাবুল। একপ্রকার বাধ্য হয়ে মেয়েদেরকে নিয়ে বিদ্যাগঞ্জে বাপের বাড়িতে চলে যান। পরবর্তীতে এলাকায় আপোষ মিমাংসায় জমির মালিক শাহিদা পক্ষে রায় হলে তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে বসেন বাবুল। এ বিষয়ে থানায় মামলা হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠান। জামিনে মুক্তি পেয়ে বাবুল তার ভাবি ও ভাতিজিদের উপর আরও হিংসাত্মক হয়ে জমিটি পুনরায় নিজের কব্জায় নিয়ে সেখানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেন এবং তাদেরকে হত্যার হুমকি দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে স্বামীর জমি দখল পেতে আইনের আশ্রয় নিয়ে আদালতে মামলা করেন ওই নারী। এর আগে একাধিকবার থানায় ও স্থানীয়ভাবে আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করা হলে শাহিদা আসলেও বাবুল আসতে অস্বীকৃতি জানাই বলে জানিয়েছেন থানা পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে শাহিদা বেগম বলেন, আমার স্বামীর জমি সে দখল করে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখছে। জমিতে আসতেও দেয় না এবং বিক্রিও করতে দেয় না। সে আদালত, পুলিশ কারো বিচার মানতে চাই না। আমি ৩ মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাব? দেশে কি গরীবের জন্য কোন আইনকানুন নাই? আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। শাহিদার তিন মেয়ে বলেন,আমরা এতিম। আমাদের বাবা-ভাই কেউ নেই। চাচার কারণে বাপের চিকিৎসার জন্য আগে জমিটি বিক্রি করা যায়নি। এখনোও পর্যন্ত তিনি জমি জবরদখল করে রাখছেন।এতিম হয়েছি বলে কি? আমরা বাবার জমি থেকে বঞ্চিত হব। না প্রকাশ না করার শর্তে বাবুলের একজন ভাতিজা বলেন, চাচা জীবিত নাই বলে,ছোট চাচা (বাবুল) এতিম পোলাপনের জমি আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে। চাচা ডাকাত প্রকৃতির লোক জেনে কেউ কিছু বলতেই সাহস পাই না। অভিযোগ অস্বীকার করে বাবুল মিয়া বলেন, হাফিজ উদ্দিন (ভাই) আমার মায়ের কাছ থেকে বেশি লিখে নিয়েছে। বেক জমির মালিক হেরাই হয়বো, তা তো আর হতে দেব না। উল্লেখ্য,বাবুল মিয়া কুখ্যাত বাক্কা গ্রুপের অন্যতম সদস্য ছিল বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ২০০৪ খাগডহর কল্পা রেল লাইনে এলাকায় চাঁদাবাজিকালে জনতার হাতে রক্তাক্ত জখম হওয়া অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বাবুলের নামে একাধিক মামলা রয়েছে এবং জেলও খেটেছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনেরা। বর্তমানে একাধিক ডাকাত দলের সঙ্গে তার সঙ্গতা রয়েছে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।