Durnitibarta.com
ঢাকামঙ্গলবার , ২৯ আগস্ট ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাইবার নিরাপত্তা আইন চূড়ান্ত, ৪টি ধারা জামিন অযোগ্য

প্রতিবেদক
বার্তা বিভাগ
আগস্ট ২৯, ২০২৩ ২:০৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনি প্রবেশ, কম্পিউটটার ও কম্পিউটার সিস্টেমে ক্ষতি, সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধের জন্য অজামিনযোগ্য চারটি ধারা রেখে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ব্রিকসের ব্যাংকে বাংলাদেশের এক শতাংশ শেয়ার গ্রহণের বিষয়টিও অনুদোমন পায় বৈঠকে।

মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে সর্বজনীন পেনশন নিয়ে ‘অপপ্রচার’ রোধে নজরদারির নির্দেশ দেন পধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া বাংলাদেশ-ইথিওপিয়া বিমান চলাচল, সংসদে নারী আসনে প্রার্থিতায় জামানত দ্বিগুণ, ৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক হওয়া যাবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

সভা শেষে সচিবালয়ে ফিরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘খসড়ায় সংজ্ঞাসহ সামান্য কিছু পরিবর্তন করে সেটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৭, ১৯, ২৭ ও ৩৩ ধারা অজামিনযোগ্য রয়েছে। বাকিগুলো জামিনযোগ্য।’

১৭ ধারায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বে-আইনি প্রবেশ, ১৯ ধারায় কম্পিউটটার ও কম্পিউটার সিস্টেমে ক্ষতি, ২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং ৩৩ ধারায় হ্যাকিং সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা আছে।

বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে একই আদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছে সরকার।

গত ৭ অগাস্ট এই আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। সংসদের আগামী মাসের অধিবেশনে এই আইন পাস করা হবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই জানিয়েছেন।

তবে নতুন আইনেও উদ্বেগ জানিয়ে আসছে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো ও অধিকারকর্মীরা।

প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়া নিয়ে অংশীজন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ ছিল, আইনে সাজা কিছু কমানো ও ধারা জামিনযোগ্য করা ছাড়া বিষয়বস্তুতে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এতে মানুষের হয়রানি কমাবে না।

গত ৯ আগস্ট আইনটির খসড়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অংশীজনদের মতামত চাওয়া হয়। এ জন্য তারা ১৪ দিন সময় দিয়েছিল। প্রায় ৫০০টি মতামত জমা পড়ে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, যে দুটি ধারা নতুন করে জামিনযোগ্য করা হয়েছে, তার একটি ২১ নম্বর ধারা। অন্যটি কোন ধারা, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি মন্ত্রী।

উল্লেখ্য, ২১ নম্বর ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা প্রভৃতি অবমাননার সাজার কথা বলা হয়েছে।

সর্বজনীন পেনশন নিয়ে ‘অপপ্রচার’, নজরদারির নির্দেশ

মন্ত্রিসভা বৈঠকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে ‘মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে’ মন্তব্য করে এ বিষয়ে নজরদারি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। এটা সাংঘাতিক রকম মানুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে ১০ হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। লাখেরও বেশি রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। কিন্তু ঐতিহাসিক উদ্যোগটির বিপক্ষে মিথ্যা অপপ্রচার বা নেতিবাচক প্রচার চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত তথ্য, সরকার কি করেছে, কি করতে যাচ্ছে, কীভাবে মানুষ উপকৃত হবেন এ ব্যাপারটা জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে উনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন।’

মাহবুব হোসেন বলেন, ‘জনগণ যেন জেনেশুনে, বুঝে এখানে অংশগ্রহণ করে। কোনো রকম অপপ্রচারে তারা যেন প্রভাবিত হতে না পারে সে দিকে সকলকে নজরদারি রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’

বেশ কয়েক বছরের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পর গত ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এই স্কিমে ৬০ বছর পর্যন্ত মানুষ টাকা জমা করবে এবং এরপর থেকে আজীবন মাসে মাসে অর্থ পাবে। ১৮ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছর বয়সে এসেও টাকা জমানো শুরু করা যাবে। তবে যত বেশি বছর টাকা জমা হবে, সুবিধা হবে তত বেশি।

বাংলাদেশ-ইথিওপিয়া বিমান চলাচল অনুমোদন

মন্ত্রিসভা বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইথিওপিয়ার মধ্যে বিমান চলাচলের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশি যাত্রীদের আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে আনা-নেওয়ার টার্গেট নিয়ে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ২০২২ সালে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছিল। বেবিচক তাদের নিজ দেশের কূটনীতিকদের মাধ্যমে (ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেল) যোগাযোগ করে সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আবেদনের অনুরোধ করে। পরে নির্ধারিত প্রক্রিয়া মেনে তারা ফ্লাইট পরিচালনার আবেদন করে।

ব্রিকসের ব্যাংকে ১ শতাংশ শেয়ার পাচ্ছে বাংলাদেশ

ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১ শতাংশ শেয়ার (মালিকানা) পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংসদে নারী আসনে প্রার্থিতায় জামানত দ্বিগুণ

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনে জামানতের পরিমাণ দ্বিগুণ করার বিধান রেখে আইন সংশোধনের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

বৈঠকে জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন (সংশোধন) আইন, ২০২৩ এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এক ব্রিফিংয়ে বলেন, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনে জামানতের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার টাকা। সেটিকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে।

২০০৪ সালের আইনে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ছিল ৪৫টি। পরে ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের সংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টি করা হলেও আইনে তার সংশোধনী আনা হয়নি। এখন এই বিষয়টিকে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের সময়সীমা রয়েছে ৪৫ দিন। আইন সংশোধন করে তা সাধারণ সংসদ সদস্যের নির্বাচনের মত ৯০ দিন করা হচ্ছে।

৬০ বিঘার বেশি জমির মালিক হওয়া যাবে না

৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমির মালিক হওয়া যাবে না, এমন বিধান রেখে ‘ভূমি সংস্কার আইন, ২০২৩’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান। এর আগে ১৯ মে এ আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা।

৬০ বিঘার চেয়ে যারা অনেক বেশি সম্পত্তির মালিক তাদের ক্ষেত্রে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যদি এরকম কেউ থাকে এবং যদি কেউ সে আইনের আওতায় মামলা করেন তাহলে নতুন আইনে যে শাস্তির বিধান আছে তা প্রযোজ্য হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনে বলা আছে, যদি কেউ ৬০ বিঘার বেশি জমি নতুন করে কেনেন, তখন ওই অংশটা সরকারের নজরে এলে সেটা নিয়ে নিতে পারবে। আইনে যে ধারাটা সংযোজন করা হয়েছে, সেটা হলো এই যে আপনার ৬০ অধিক, আপনি নতুন কোনো মালিকানা নিতে পারবেন না। বলা হয় নাই এখানে ৬০ বিঘার বেশি থাকলে আপনি ছেড়ে দেবেন। যদি আপনার ৬০ বিঘা কৃষি জমি থাকে তাহলে নতুন করে আর মালিকানা নিতে পারবেন না। এটা আপনি উত্তরাধিকার সূত্রে হোক বা নিজের কেনা হোক। ৬০ বিঘার বেশি আপনি আর মালিকানা নিতে পারবেন না।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে ভিসা সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইন, ২০২৩’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।