নিজস্ব সংবাদদাতা : ময়মনসিংহে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রকল্পে সাবেক উপপরিচালক ফারজানা পারভিনসহ ৪ জনের নামে ২৯২ কোটি টাকা পুকুরচুরির ঘটনার তদন্ত চলছে। আদালতের নির্দেশে দুদক এই তদন্ত শুরু করেছে। লাগাতার ১৮ বছর ধরে একই স্থানে চাকরি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া এই কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলাকালীন আবারও ময়মনসিংহে ফিরে আসার জোর তদবির চালাচ্ছে। এর ফলে বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত ও সঠিক তথ্য উদঘাটনে প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সকল বিধিমালা উপেক্ষা করে ফারজানা পারভিন দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে গেলবছর পদোন্নতি পেয়ে কিশোরগঞ্জে উপপরিচালক হিসেবে যোগ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফারজানা পারভিন ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েন। লুটপাট করেন কর্মসূচির কোটি কোটি টাকা। তার পুকুরচুরির এই বিষয়টি জানাজানি হলে যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। এই ঘটনায় আদালতের নির্দেশে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একই সাথে সারাদেশের ২০৭ উপজেলায় দুর্নীতির তদন্ত চলছে বলে জানা যায়। ফারজানা পারভিনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অনুসন্ধানে নেমে জানা যায়, সীমাহীন দুর্নীতিবাজ ও বহুল বিতর্কিত এই কর্মকর্তা লাগাতার ১৮ বছর একই স্থানে চাকরির সুবাদে পুকুরচুরি করে টাকার পাহাড় গড়েছেন। লুটেপুটে খেয়েছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এই কর্মকর্তা ময়মনসিংহ জেলায় কর্মরত থাকাকালে ফুলবাড়িয়া, ত্রিশাল, গৌরিপুর ও হালুয়াঘাট উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির প্রশিক্ষণ শুরু হয়। বিগত ২০১৭-২০১৮ সালের ওই কর্মসূচিতে প্রতিদিন ৪ ঘন্টা করে মোট ২১০ দিন কাগজে-কলমে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, কর্মসূচি চলাকালে ফারজানা পারভিন একই সময়ে ওই চার উপজেলায় ২১০ দিন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এই সময়টাতে তিনি ক্লাস নিয়েছেন মোট ২০০০ টি। অথচ, ওই পরিমাণ ক্লাস নিতে হলে তাকে প্রতিদিন ১০ টি করে ক্লাস নিতে হয়েছে। সরেজমিনে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ত্রিশাল, গৌরিপুর, হালুয়াঘাট ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৫০ থেকে ৭০ কিলোমিটার।জানা যায়, ওই সময়টাতে প্রতি উপজেলায় ১০ টি করে ১০০ জনের একসাথে ১০ টি ব্যাচের প্রশিক্ষণ হয়েছিল। প্রতি ব্যাচ প্রশিক্ষণ সিডিউল এবং তিনি কী বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তা জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মুভমেন্ট রেজিস্টার এবং উপজেলায় প্রতিদিনকার সম্মানিভাতা গ্রহণের রেজিস্টার পরীক্ষা করলে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা বেরিয়ে আসবে।
একইভাবে সহকারী পরিচালক, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ও অন্যান্য সরকারী কর্মকর্তাদের নামে প্রশিক্ষশণের সম্মানিভাতা তুলে ফারজানা পারভিনের নেতৃত্বে প্রশিক্ষণ না করিয়ে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া ভূয়া এনআইডি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণার্থী ভর্তি, ভূয়া সংযুক্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীর নিকট থেকে অর্থ আদায় করা হয়েছে। তাছাড়া বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত বা আইবাস প্লাশ প্লাশ অতিরিক্ত বাজেট গ্রহণ করে ফারজানা পারভিন অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এসবের মধ্যে রয়েছে, অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবুল বাশারের নামে ২২০টি ক্লাশ, ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের প্রশিক্ষক, দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজ আক্রান্ত বদরুজ্জামান ফকিরের নামে প্রায় ১০০০টি ক্লাশ দেখিয়ে বিশাল অংকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া সহকারী পরিচালক মোঃ নূরুজ্জামান চৌধুরী ও মোঃ জোয়াহের আলী মিয়া ২০০০টি করে ৪০০০ ক্লাশের সম্মানিভাতা গ্রহণ করেছেন। এমনকি উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তারাও ১০০০ থেকে ১৩০০টি ক্লাশের সম্মানিভাতা গ্রহণ করেছেন। এভাবেই ফারজানা পারভিনের নেতৃত্বে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রশিক্ষণের ভাতার কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার তার তদন্তে ২৫২ জন প্রশিক্ষণার্থী ভূয়া থাকায় তাদের নামে বিল পরিশোধ না করে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে সরকারী কোষাগারে ৫২ লক্ষ টাকা জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, এই ফারজানা পারভিন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ না করে মহান নেতার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেন। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে একই কর্মস্থলে থাকার পরও এরকম একজন চার্জসীটভূক্ত কর্মকর্তাকে আবারও তার পূর্বের কর্মস্থলে পদায়ন করা সমীচিন হবে কিনা, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিবেচনা করে দেখার অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও সচেতন মহল। যদিও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলমান রয়েছে। দুদকের তদন্ত চলাকালীন এরকম কর্মকর্তাকে বদলী করলে দুর্নীতির তদন্ত বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও তাদের দাবি।