Durnitibarta.com
ঢাকাসোমবার , ১৭ এপ্রিল ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাণী

প্রতিবেদক
বার্তা বিভাগ
এপ্রিল ১৭, ২০২৩ ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে হলেও ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ নির্যাতিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ, শহীদ মোহাম্মদ মনসুর আলী এবং শহীদ আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্তরের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগ জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদে সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ যথাক্রমে ১৬৭টি এবং ২৯৮টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সকল সংসদ সদস্য রেসকোর্স ময়দানে ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শপথ গ্রহণ করেন।

‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ সঙ্গীত দিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন হয়। তিনি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা পূর্ব বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। বাংলাদেশের সকল প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রম তার নির্দেশিত পথেই পরিচালিত হতে থাকে।

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তা লিখে যান যা ইপিআর ওয়্যারলেস, টেলিগ্রাম এবং টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এর অব্যবহিত পরেই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ১০ এপ্রিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি গণপরিষদ গঠনপূর্বক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক ইতোপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতার প্রতি দৃঢ় সমর্থন ও অনুমোদনের মধ্য দিয়ে মুজিবনগর সরকার একটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে।

তিন আরও বলেন, ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে শতাধিক দেশি-বিদেশি সাংবাদিকের উপস্থিতিতে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। পাশাপাশি এদিন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয়। মেহেরপুর হয়ে উঠে অস্থায়ী সরকারের রাজধানী এবং সেদিন থেকে এ স্থানটি ‘মুজিবনগর’ নামেই পরিচিতি লাভ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিবনগর সরকারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ ও আক্রমণ চালিয়ে মেহেরপুর দখল করে। ফলে বাংলাদেশের সরকার ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় এবং সেখান থেকে কার্যক্রম চালাতে থাকে। পাকিস্তানি জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নারকীয় তাণ্ডবলীলা ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সাড়ে ৩ বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৩ নভেম্বর জেলখানায় মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চারনেতাকেও নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ছিলনা। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর আমরা জাতির পিতাসহ জাতীয় চারনেতা হত্যার বিচার করেছি।

পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করেছি। সেই থেকে গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে আমরা উন্নয়নের সকল সূচকে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশের নীচে নামিয়ে এনেছে। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আমরা বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ প্রণয়ন করেছি এবং এর বাস্তবায়নও শুরু করেছি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যে অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সকল দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধভাবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। ইনশাআল্লাহ, আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজ এবং স্মার্ট সরকার ব্যবস্থার সমন্বয়ে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’।

প্রধানমন্ত্রী ‘মুজিবনগর দিবস’ উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।