অনলাইন ডেস্ক:
পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দুবাই পুলিশের হাতে আটক হয়েছে বলে ‘খবর’ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তা গুঞ্জন নাকি সত্যি, নিশ্চিত করতে পারেনি বাংলাদেশ পুলিশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় এ খবর লেখার সময় বাংলাদেশ পুলিশের ইন্টারপোল ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ডেস্ক জানিয়েছে, তাদের কাছে দুবাইয়ে আরাভ খান আটকের কোনো তথ্য নেই। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ‘আরাভ খান আটক হয়েছে। তবে বাংলাদেশ পুলিশকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে আটকের খবর জানানো হয়নি।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি) মনজুর রহমান বলেন, ‘আরাভ খান আটকের কোনো তথ্য দুবাই পুলিশ জানায়নি। দুবাই পুলিশের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।’
তবে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, আরাভ খানের রেসিডেন্স পারমিশন বাতিলের পাশাপাশি বিনা নোটিশে আরাভের দুবাই ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সোমবার রাত থেকেই আরাভ খান দুবাই পুলিশের নজরদারিতে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর একইভাবে মঙ্গলবার সকালে শোনা যায় আরাভের আটকের বিষয়টিও। তবে দুবাইয়ের কোনো গণমাধ্যমও আরাভের গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি বলে বাংলাদেশ পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে সোমবার পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, আরাভকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ইন্টারপোল অনুরোধ গ্রহণ করেছে এবং তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আরাভের নামে কোনো রেড নোটিশ ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে পুলিশ সদরের বক্তব্য হচ্ছে, রেডনোটিশ ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের জন্য তিন-চার দিন সময় লাগবে।
এর আগে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, আরাভকে দুবাই থেকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মামুন ইমরান খান ২০১৮ সালের ৮ জুলাই রাতে বনানীর একটি বাসায় খুন হন। পরদিন গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার উলুখোলায় লাশে পেট্রল দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। ১০ জুলাই কালীগঞ্জ থানা-পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম ১০ জুলাই বনানী থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় ডিবি পুলিশ ২০১৯ সালে রহমত, রবিউল (আরাভ), সুরাইয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এই মামলায় ইউসুফ নামের এক যুবক রবিউল সেজে ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। চার মাস পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ২০২১ সালের ৬ মার্চ ইউসুফ মুক্তি পান। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা চলছে।
এদিকে হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগে দুই কিশোরীর বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগপত্র দেয় ডিবি। এ মামলা বিচারাধীন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এ।
আরাভই পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল। এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি রহমতউল্লাহ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, রবিউলের বাসায় থাকা দুই কিশোরীকে দিয়ে মামুনকে বনানীতে আসতে বলেন তিনি। রবিউলের পরিকল্পনা ছিল মামুনকে ব্ল্যাকমেল করা। রহমতুল্লাহর সঙ্গে যোগসাজশে তিনি এই পরিকল্পনা করেন। মামুনের মৃত্যুর পর ব্লেড দিয়ে তাঁর হাত ও পায়ের আঙুল কেটে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছিলেন রবিউল। লাশ গুমের পরিকল্পনাও তার। লাশ গুম করতে বস্তা, সাদা কাপড় ও গাড়ির ব্যবস্থাও করেন রবিউল। হত্যার পরদিন ভোরে রহমতুল্লাহর গাড়ি নিয়ে আসেন রবিউল। রবিউল মোটরসাইকেলে করে খিলক্ষেতে একটি পাম্পে গিয়ে ওই গাড়িতে পেট্রল কিনে দিয়ে ঢাকায় ফেরেন। পরে বনানীর বাসা থেকে দুই কিশোরীকে নিয়ে নিজের সবুজবাগের বাসায় যান।
সূত্র বলেছে, রবিউল প্রতারণা করতে আপন, হৃদয়, হৃদি, সাগরসহ বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন। আর আরাভের বাড়ি আশুতিয়া গ্রামের মানুষ তাকে চেনেন সোহাগ মোল্লা নামে। বিভিন্ন নামে তার বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান, রমনা, শেরে বাংলা নগর ও উত্তরখান থানায় মামলা রয়েছে। কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে তিনি আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই চলে যান। সম্প্রতি দুবাইয়ে তার স্বর্ণের দোকান আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ বিভিন্ন তারকাদের জড়ো করে আলোচনায় আসেন তিনি।