সালটা ১৯৮৪। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একইসঙ্গে সিনেমা জগতে পথচলা শুরু করেছিলেন সোহেল চৌধুরী ও পারভীন সুলতানা দিতি। পরবর্তীতে তারা জুটি বেঁধে একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন। সেই সূত্রেই মন দেওয়া-নেওয়া এবং ১৯৮৬ সালে বিয়ে।
এক বছর বাদেই অর্থাৎ, ১৯৮৭ সালে সোহেল-দিতি দম্পতির সংসার আলো করে আসেন তাদের প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরী। এর দুই বছরের মাথায় ১৯৮৯ সালে জন্ম হয় ছেলে শাফায়েত চৌধুরী দীপ্তর। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর বিচ্ছেদ ঘটে। প্রথম ঝড়টা তখনই আসে দুই সন্তান লামিয়া ও দীপ্তর জীবনে।
এরপর যে আরও একটি বড় ঝড় অপেক্ষা করছিল, তা হয়তো তারা স্বপ্নেও ভাবেননি। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবের সামনে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন তখনকার জনপ্রিয় নায়ক সোহেল চৌধুরী। বাবাকে হারিয়ে দুই সন্তানেরই ঠাঁয় হয় মা দিতির কাছে। কিন্তু আরেকটি ঝড় এসে নিয়ে যায় তাদের মা-কেও।
মরণব্যাধি ক্যান্সারে ভুগে ২০১৬ সালের ২০ মার্চ বিকালে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা দিতি। মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে তখন এতিম হয়ে যান দুই সন্তান লামিয়া এবং দীপ্ত। এখন কোথায় আছেন সোহেল-দিতি দম্পতির সেই দুই সন্তান? তারা করছেনই বা কী?
সোহেল চৌধুরী এবং দিতি বেঁচে থাকলে হয়তো গর্বে তাদের বুক ভরে যেত যে, তাদের দুই সন্তানই যে যার জায়গায় নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সঠিক পথেই এগোচ্ছেন। বড় সন্তান লামিয়া চৌধুরী কানাডার টরেন্টো ফিল্ম স্কুল থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে এখন ঢাকাতেই থাকেন। নির্মাতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি।
মা দিতির মৃত্যুর পর ২০১৬ সালে তার ইচ্ছা অনুযায়ী ‘দুই পুতুল’ নামে একটি নাটকও নির্মাণ করেন লামিয়া। যদিও এরপর আর ক্যামেরার পেছনে তাকে সেভাবে দেখা যায়নি। নির্মাণের পাশাপাশি লামিয়া বর্তমানে ফেসবুকে একটি পেইজ খুলে ফাস্টফুড জাতীয় খাবার সরবরাহ কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
অন্যদিকে, সোহেল-দিতির ছেলে দীপ্ত চৌধুরীও বোনের মতো কানাডায় পড়াশোনা করেছেন। সেখানকার রিয়ারসন ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি বর্তমানে নেদাল্যান্ডসের আমস্টারডামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বিপণন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। গত বছর নেদারল্যান্ডসের এক তরুণীকে বিয়ে করে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন দীপ্ত।
জীবনের এই পর্যায়ে এসে লামিয়া আর দীপ্তর একটাই আফসোস, বাবা হত্যার দুই যুগ কেটে গেলেও এখনো তারা বিচার পাননি। যদিও মঙ্গলবার সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আশীষ চৌধুরীকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। স্বীকারোক্তিতে তিনি ওই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছেন।