ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
মরিয়মের বয়স ছয় কি সাত বছর। দুই বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একদিন মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় বেড়াতে যায়। বিভিন্ন প্রাণী দেখতে দেখতে হঠাৎ বোনদের হাতছাড়া হয়ে হারিয়ে যায় মরিয়ম। পরে চিড়িয়াখানার ভিতরে ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজে না পেয়ে চিড়িয়াখানার গেইটে মাইকিং করে মরিয়মের পরিবারের লোকজন। তবে, তাকে খোঁজে পায়নি তার বোনেরা।
মরিয়ম হারিয়ে যাওয়ার পর ঢাকার সরকারী চাকরিজীবী মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ ও রাবেয়া আহমেদ দম্পত্তির কাছে নিজ সন্তানের মতোই বড় হন।
১১ বছর পর রবিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই মরিয়ম খুঁজে পেয়েছে তার হারানো পরিবারকে। ১২ বছর পর মেয়েকে খোঁজে পেয়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
পরে ওই দিন রাতেই মরিয়ম তার নিজ বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের কান্দানিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ফিরে আসে। মরিয়ম ওই মৃত আমছর আলী ও মোছা. বেগম দম্পতির মেয়ে।
পরদিন সকালে খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ির উঠানে বসে আছেন মরিয়ম। তাকে ঘিরে বসে আছেন বাড়ির লোকজনসহ আশপাশের উৎসুক মানুষজন। মরিয়মকে দেখার জন্য পাড়া প্রতিবেশী ও নারী-শিশুরা ছুটে আসছে বাড়িতে।
এ বিষয়ে মরিয়মের মা বেগম বলেন, তার দুই মেয়ে গাজীপুরের জয়দেবপুরে একটি গামেন্টসে চাকুরি করতো। মরিয়ম সেখানের যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। পরে জয়দেবপুরে বোনদের বাসায় বেড়াতে গিয়ে বড় দুই বোন সফলা ও লাইলীর সাথে মরিয়ম চিড়িয়াখানা দেখতে যায় মরিয়ম। সেখানে বিভিন্ন প্রাণী দেখতে দেখতে হঠাৎ বোনদের হাতছাড়া হয়ে হারিয়ে যায় মরিয়ম। পরে চিড়িয়াখানার ভিতরে ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজে না পেয়ে চিড়িয়াখানার গেইটে মাইকিং করে মরিয়মের পরিবারের লোকজন। তবে, মরিয়মকে আর খোঁজে পায়নি তার পরিবার। এভাবেই কেটে যায় ১১ বছর বছর।
তিনি আরও বলেন, আপন ঠিকানার মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খোঁজে পেয়ে আরজে কিবরিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
এ বিষয়ে মরিয়ম জানায়, হারিয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি তাকে একটি বাসায় নিয়ে যান। সেখানে কিছুদিন থাকার পর বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেন। এরপর এক নারী রাস্তায় কাঁদতে দেখে মুসলেই উদ্দিন আহমেদ ও রাবেয়া আহমেদ দম্পতির বাসায় দিয়ে আসেন। এর ওই দম্পত্তি নিজেদের সন্তানের মতো করে দীর্ঘ ১১ বছর লালন পালন করেন। সেখানেই বড় হয়ে উঠেন মরিয়ম।
বড় বোন সুফলা বলেন, বোনের ছোট বেলার অনেক স্মৃতি আমার মনে আছে। বোনকে হারানোর পর সব সময় মন খারাপ থাকতো।ফেসবুকে আপন ঠিকানার শেয়ার দেয়া ভিডিও দেখে তাদের সাথে যোগাযোগ করে ঢাকায় গিয়ে বোনকে ফিরে পেয়েছি। তবে বিশ্বাস ছিলো একদিন ঠিকই মরিয়ম ফিরে আসবে। আমাদের সেই আশা পুরণ হয়েছে।