Durnitibarta.com
ঢাকাবুধবার , ১৯ জানুয়ারি ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রিকশা চালিয়ে মসজিদ, হাসপাতাল-বিদ্যালয় করা জয়নাল আর নেই

প্রতিবেদক
Khairul Islam Alamin
জানুয়ারি ১৯, ২০২২ ৩:১৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ময়মনসিংহের সদর উপজেলার গরিবের বন্ধু ও সাদা মনের মানুষ রিকশা চালক জয়নাল আবেদিন (৬৫) মারা গেছেন। জয়নাল আবেদিন সদর উপজেলার পরানগঞ্জ ইউনিয়নের টান হাসাদিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল গনির ছেলে। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও দুই নাতী রেখে গেছেন। তবে, ওনার ছেলে চাকরী করতে আনুমানিক পাঁচ মাস আগে সুইডেন চলে গেছেন। তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।

বুধবার (১৯ জানুয়ারী) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরানগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড হাসাদিয়া গ্রামের গ্রামের ইউপি সদস্য রুবেল মিয়া গণমাধ্যমকে তার মৃত্যু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি জয়নাল আবেদিন স্ট্রোক করেন। পরে গত ১৪ ফেব্রুয়ারী তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি সকালের দিকে মারা যান।

তিনি আরও বলেন, জয়নাল আবেদিন মৃত্যুর আগে বলেছিলেন। তাকে যেন নিজ গ্রামে মসজিদের পাশে সামাজিক করবস্থানে দাফন করা হয়। সেই অনুযায়ী বাদ আসর জানাযা শেষে তাকে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়।

এ বিষয়ে পরানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হানিফা সরকার বলেন, তার মৃত্যুকে আমরা শোকাহত। তবে, তার প্রতিষ্ঠা করা প্রতিষ্ঠানগুলো যেন চালু থাকে। সে জন্য কাজ করা হবে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল ও বিদ্যালয় করার পরে সে একটি মসজিদ নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছিলেন। তবে, মসজিদের কাজ সম্পন্ন হয়নি। সেই মসজিদের পাশেই তাকে দাফন করা হয়েছে।

সুত্র জানায়, জয়নাল আবেদিন বাবার মৃত্যুর পর পরই স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে চলে যান ঢাকায়।এরপর রিকশা চালিয়ে অল্প অল্প করে অর্থ জমাতে শুরু করেন। সেই অর্থের বেশিরভাগই ব্যাংকে জমাতেন। ২০০১ সালে সব মিলিয়ে ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়ে হাসপাতাল করার জন্য বাড়ি ফেরেন।
বাড়ি ফিরে নিজ গ্রামে টান হাসাদিয়া গ্রামে ২৪ শতাংশ জমি ৪০ হাজার টাকায় কিনেন। সেখানে ছোট একটি আধা পাকা টিনশেড ঘর তৈরি করে জয়নাল আবেদিন তার মেয়ের নামে মমতাজ হাসপাতাল গড়ে তুলেন।

সেখানো জ্বর, পেট, মাথা ও বুক ব্যথাসহ বাতের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, রক্তচাপ, অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা, সর্দি কাশি, গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পাতলা পায়খানাসহ প্রাথমিক রোগের সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হতো। শুধু চিকিৎসা সেবাই নয়,দরিদ্র হাসাদিয়া গ্রামের মানুষকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে ২০০৭ সালে টান হাসাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তুলেন।

এরপর ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এসো বাংলাদেশ গড়ি শীর্ষক রোড শো চলাকালে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জয়নাল আবেদিনকে সাদা মনের মানুষ হিসেবে সনদ ও পদক দেওয়া হয়। ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর ৪০তম জাতীয় সমবায় দিবসে জয়নাল আবেদিনকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।