Durnitibarta.com
ঢাকাশনিবার , ৯ মার্চ ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কয়লা চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্য তাহিরপুরের আনোয়ারপুর বাজার

প্রতিবেদক
বার্তা বিভাগ
মার্চ ৯, ২০২৪ ৭:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিশেষ প্রতিনিধি: কয়লা চোরাকারবারিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের আনোয়ারপুর বাজার। দীর্ঘদিন ধরে এ বাজারের উত্তর দিকের অংশে (নদীর পাড় ঘেঁষে যাদুকাটা ও রক্তি নদী পার-ফতেহপুর সড়কে) চলছে চোরাকারবারিদের অবৈধ কার্যক্রম। বছর জুড়েই চলে তাদের এই কার্যক্রম।

দিনে বেলায় যেমনই থাকুক, রাতের বেলায় পাল্টে যায় এখানকার দৃশ্য। চোরাই কয়লাবাহী গাড়িগুলো দাপিয়ে বেড়ায় সড়কে। তেমনি নদী পথেও বসে চোরাই কয়লা ভর্তি নৌকার মেলা। আর নদীর পাড়েই সেই কয়লার ডিপু করে রেখেছে সংঘবদ্ধরা। বিষয়টি বর্তমানে ‘ওপেন সিক্রেট’ হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের আনোয়ারপুর বাজার সংলগ্ন ব্রিজের পাশে (আনোয়ারপুর- ফতেহপুর সড়কে) এ রমরমা বাণিজ্য চলছে।

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইন বিষয়টি তুলে ধরলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা জন্ম হয়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অদৃশ্য কারণে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বন্ধ হচ্ছে না এসব চোরাচালান ও চাঁদাবাজি। ফলে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন রাঘব বোয়ালরা।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত করে সীমান্তের দায়িত্বশীলদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে সীমান্তের বিভিন্ন চোরাই পথ দিয়ে চিহ্নিত চোরাচালানীরা ভারতীয় কয়লা বাংলাদেশে আনছে। পরে নৌপথে এনে ট্রাকে করে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠিয়ে দেয় ব্যবসায়ী নামধারী একটি চক্র।

আনোয়ারপুর বাজার থেকে প্রতিদিন ১০-১২টিরও অধিক কয়লার নৌকা ঘাটে আসে। এসব কয়লার বেশির ভাগই চোরাই পথে আনা। পরে নৌকা থেকে এই এলাকার আশ পাশে মজুদ করা হয়। আবার প্রতিদিন ১০-১৫টি ট্রাক লোড হয় এই এলাকা থেকে। প্রতিটি ট্রাকে ২০-২২ টন কয়লা লোড করা হয়, যার মূল্য ৪-৫ লাখ টাকা। সে হিসেবে দৈনিক প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেশী কয়লা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। এর সঙ্গে ভারতীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাদকদ্রব্যও পাচার করা হয় বলে জানা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, কয়লাবাহী ট্রাকগুলো থেকে স্থানীয় ৭-৮জনের একটি চক্র মোটা অঙ্কের চাঁদা উত্তোলন করে থাকে। এছাড়াও এই অংশে কয়লা ডিপো করে মজুদ করে রেখেছে চক্রটি। আর প্রতিদিন সেখান থেকে পাচার করছে কয়লা। কিন্তু কেউই এর প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় তিনটি শুল্ক স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশন দিয়ে এলসির মাধ্যমে কয়লা ও চুনা পাথর আমদানি করে ৮ শতাধিক ব্যবসায়ী। কিন্তু কয়লা চোরাকারবারিদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈধ ব্যবসায়ীরা। আর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

কয়লা লোড-আনলোড কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, ভাই আমরা শ্রমিক। টাকার বিনিময়ে এই কয়লা লোড-আনলোড করি। তবে কয়লা গুলো বৈধ না তা জানি না। তবে শুনেছি এসব কয়লা নাকি চোরাই পথে।

এদিকে চোরাকারবার বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজ। অবৈধ ব্যবসা দেশের অর্থনীতি ও আইন শৃঙ্খলায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানান তারা। সীমান্তে চোরাচালন বন্ধে সরকারের তৎপরতাও কামনা করছেন তারা।

সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বকত সম্প্রতি একটি সভায় উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ইদানীং চোরাকারবারিদের জোনে পরিণত হয়েছে সুনামগঞ্জ। আগে এমনটা ছিল না। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো এই ব্যবসার সঙ্গে আমাদের তরুণ ছেলেরা যুক্ত হয়ে পড়ছে। এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। আমি এ নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কথা বলেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সকল শ্রেণির লোকদের সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

২৮ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকার পরও সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিজিবি অনেক তৎপর। প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে ভারতীয় পণ্য জব্দ করা হচ্ছে। চোরাচালান বন্ধে জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্ জানান, চোরাচালান বন্ধে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বিশেষ করে আঞ্চলিক সড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জেলায় আমরা বড় বড় চালান জব্দ করেছি। এসব কাজে সীমান্তের গুটি কয়েক লোক জড়িত রয়েছে বলে জানান তিনি।