Durnitibarta.com
ঢাকাসোমবার , ২০ মার্চ ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যে কোনো মূল্যে পথেঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে

প্রতিবেদক
Khairul Islam Alamin
মার্চ ২০, ২০২৩ ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বার্তা ডেস্ক:

বছরজুড়েই চাঁদাবাজি চললেও রমজান ও ঈদ ঘিরে চাঁদাবাজরা বেপরোয়া রূপে আবির্ভূত হয়। এতে পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক গুণ বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে যে কোনো মূল্যে পথেঘাটে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের কার্যকরী উদ্যোগ চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রোববার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সভায় ব্যবসায়ীরা ওই দাবি জানান। তাঁদের দাবি শুনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সভাপতিত্ব করেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, এমনিতেই জ্বালানির মূল্যের কারণে পণ্যের পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে পথে বিভিন্ন জায়গায় এমনকি হাটবাজারে অবৈধ চাঁদা দিতে হলে বাজারের অবস্থা আরও খারাপ হবে। ফলে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে যে কোনো মূল্যে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। তাঁরা জানান, একে তো ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচ বেড়েছে, আবার দর নিয়ে লুকোচুরিও হচ্ছে। এমনও হচ্ছে, ১০৫ টাকা দরে আমদানি মূল্য পরিশোধ দেখানো হলেও তাদের দিতে হচ্ছে ১১০ টাকা।

বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, রমজানে পণ্যবাহী ট্রাকে যাতে কোনোভাবেই চাঁদাবাজি না হয়, তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্য সচিবকে এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) পর্যায়ে কথা বলে মহাসড়কে যাতে পণ্যবাহী ট্রাক থামানো না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। কোনো অবস্থায় চাঁদাবাজি করতে দেওয়া যাবে না।

বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রমজান সামনে রেখে তদারকি জোরদার করা হচ্ছে। কেউ কৃত্রিম উপায়ে অবৈধ মজুত করে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করা হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উপস্থাপনায় বলা হয়, অত্যাবশ্যকীয় বেশ কিছু পণ্যের আন্তর্জাতিক দর গত বছরের তুলনায় কম। আন্তর্জাতিক বাজারে ১৫ মার্চ প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ৩৮ ডলার। এক বছর আগে যা ছিল ১ হাজার ৭০৩ ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দাম কমেছে প্রায় ৩৯ শতাংশ। একইভাবে পাম অয়েলের দাম কমেছে ৪৪ শতাংশেরও বেশি। মসুর ডাল ১৯ শতাংশ এবং পেঁয়াজের দম কমেছে ৭৮ শতাংশ। তবে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক ৫৪ এবং ১০ দশমিক ১০ শতাংশ।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমলেও ডলারের বিনিময় হার বাড়াসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে সে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার চিনি, সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্য নির্ধারণ করে। নির্ধারিত মূল্যে এসব পণ্য বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া রমজান পর্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে যে পণ্য পাইপলাইনে রয়েছে, সেগুলোর এলসি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ জানাতে হবে।

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও ডলারের দাম বেড়ে গেছে। যদি এমন হতো, তেলের দাম কমেছে ডলারের দাম আগের অবস্থায় রয়েছে, তাহলে দেশে দাম কমানো যেত। তার পরও প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাজারে মুরগির সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, শুল্ক কমানোর ফলে প্রতি কেজি চিনির দাম সাড়ে চার টাকার মতো কমানো যায়। সরকার ব্যবসায়ীদের পাঁচ টাকা কমানোর অনুরোধ করেছে। তাঁরাও কমাতে সম্মত হয়েছে। তবে শুল্কছাড় দেওয়া পণ্য এখনও বাজারে আসেনি, আরও কয়েক দিন লাগবে। তাই ব্যবসায়ীরা কিছুদিন সময় চেয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে, রোজার প্রথম সপ্তাহেই নতুন দাম কার্যকর হবে।

বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়, দেশে ভোজ্যতেলের (সয়াবিন, পাম ও সরিষা) বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন, স্থানীয় উৎপাদন ২ লাখ ৩ হাজার টন। বাকি ২০ লাখ টন সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল আমদানি করা হয়। গতকাল পর্যন্ত দেশের ছয় শিল্প গ্রুপের কাছে বর্তমানে ৩ লাখ ২ হাজার ১৬৩ টন ভোজ্যতেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন ভোজ্যতেল দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

গতকাল পর্যন্ত দেশের পাঁচ শিল্পগ্রুপের কাছে চিনি মজুত আছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন। একই সঙ্গে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন চিনি পাইপলাইনে রয়েছে। রমজানে প্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্য চাহিদার তুলনায় প্রায় দেড় গুণ মজুত আছে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু এবং সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, টিকে গ্রুপসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।