Durnitibarta.com
ঢাকাশনিবার , ২৯ অক্টোবর ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আটকানো যাচ্ছে না, বাজার দর লাগামহীন ঘোড়ার মত ছুটে চলছে

প্রতিবেদক
বার্তা বিভাগ
অক্টোবর ২৯, ২০২২ ২:৪০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

অনলাইন ডেস্ক:

বাজার অস্থির, নিয়ন্ত্রণহীন। সরজমিনে বাজার ঘুরলে শুধু ক্রেতাদের অসহায় মুখ দেখা যায়। তাদের প্রশ্ন, ‘অস্থির বাজার কবে শান্ত হবে?’ ভোক্তা

অধিকারের দাবি, তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন, জরিমানাও করছেন। তারপরও বাঁধতে পারছে না দ্রব্যমূল্যের ‘পাগলা ঘোড়া’।

শুক্রবার এ প্রতিবেদক সরজমিনে কাটাবন, কাঁঠালবাগান, শুক্রাবাদ, হাতিরপুল, কলাবাগান, রামপুরা কাঁচাবাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরেছে। বাজার ঘুরে জানা গেছে ক্রেতাদের কষ্টের কথা।

সেপ্টেম্বর মাসে কাঁচামরিচের সরবরাহ ভালো হওয়ায় ৩০০ টাকা থেকে ২৪০ টাকা কমে প্রতি কেজি ৬০/৭০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে গত সোমবারের ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের অজুহাত দেখিয়ে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ এখন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ডিম নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি চলছে। একটি ডিম কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ১৩ টাকা। এক হালি ৫০ টাকা। আর এক ডজন ১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুলা প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, শিমের কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়শ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুনের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, গোল বেগুন ১১০ থেকে ১২০ টাকা, ধুন্দুল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, পেঁপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, পটল ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, কচুরলতি প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, চালকুমড়া প্রতিটি আকার ভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকা, লাউ আকার ভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা, লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই কেজিপ্রতি ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা, শোল মাছ প্রতি কেজি ৪২০ থেকে ৬১০ টাকা, বোয়াল আকার ভেদে ৪৯০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, শিং মাছ আকার ভেদে ৫২০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, ট্যাংরা মাছের কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২২০ টাকা, কই মাছের কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা।

চলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিনিকেট প্রতি কেজি ৭৫ টাকা, আটাশ চাল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, নাজিরশাইল প্রতিকেজি ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মসুর ডাল চিকন ১৫০ টাকা কেজি, মসুর ডাল মোটা ১২০ টাকা, মুগডাল ১৫০ টাকা, বুটের ডাল প্রতি কেজি ১০০ টাকা, দেশি রসুনের কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, চায়না রসুন ১২০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, আদা ১৫০ টাকা, সাদা চিনি প্রতি কেজি ৯৫ টাকা, লাল চিনি ১১০ টাকা, তীর আটা প্রতি কেজি ৬২ টাকা, ময়দা ৭৫ টাকা, এসিআই ও ফ্রেশ লবণ প্রতি কেজি ৩৮ টাকা, ৫০ গ্রাম রাঁধুনি পাঁচ ফুরন গুড়ো ২২ টাকা, ২০০ গ্রাম রাঁধুনি ধনিয়া গুড়ো ৬০ টাকা, ২০০ গ্রাম রাঁধুনি গুড়ো জিরা ১৭০ টাকা, ৪০ গ্রাম রাঁধুনি গরম মশলা ৬৮ টাকা, ২০০ গ্রাম রাঁধুনি গুড়ো হলুদ ৯০ টাকা, ২০০ গ্রাম রাঁধুনি গুড়ো মরিচ ১০০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৭৮ টাকা, পাঁচ লিটার ৮৮০ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬২ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৭০০ টাকা।

সবজি ক্রেতা মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘বাজার গেলেই নাজেহাল অবস্থা। সবকিছুর অতিরিক্ত দামের কারণে নিজেকে অসহায় মনে হয়। চোখে কান্না চলে আসে। সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন, বাজার আর কতদিন পরে শান্ত হবে? আমরা নিজের সাধ্যমতো পণ্য কিনতে পারব?’

সবজি বিক্রেতা ফয়সাল মিয়া বলেন, ‘আমরা কি করব একটার পর একটা দুর্ভোগে পড়ে দেশ। সিত্রাংয়ের জন্য একদিন কাঁচামাল আসতে পারেনি। ফলে সরবরাহ কম হয়েছে। আমরা তো চাই কম দামে বিক্রি করতে। কিন্তু তা সম্ভব হয় না।’

মাছ ক্রেতা মো. সবুজ আলী বলেন, ‘প্রতিদিন টিভি চ্যানেল, পত্রিকা, অনলাইনে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে একধরনের আন্দোলন শুরু হয়েছে মানুষের। সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবাই প্রতিবাদ করছে বিভিন্নভাবে। কিন্তু কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের দেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে নাকি?’

মাছ বিক্রেতা রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরাও তো চাই সুষ্ঠুভাবে বাজার পরিচালনা করা হোক। বেশি দামে কিনে আনলেতো বেশি দামে বিক্রি করতে হবে।’

চাল ক্রেতা মো. মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘বাজারে গেলে দিশেহারা হয়ে যাই। সবকিছুর দাম অতিরিক্ত বেড়েছে। জনগণ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য মাঠে নামলে দেশের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। এখনো সময় আছে সরকার থেকে আগেভাগে বাজারের অস্থিরতা কমানো হোক।’

মুদি দোকানি ছালেক আহমেদ বলেন, ‘চকলেট থেকে পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, চিনি, ডিমসহ সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে আমাদেরও বেচাকেনা করতে কষ্ট হচ্ছে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কারসাজি প্রতিদিন ধরছি আমরা। জরিমানাও করা হচ্ছে। এখনো সময় আছে ব্যবসায়ীরা কারসাজি বন্ধ করুক। না হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বাজারের সিন্ডিকেটের সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হবে।’