Durnitibarta.com
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
আজকের সর্বশেষ সবখবর

 বর্ণাট্য ২৬ বছরে পোল্ট্রি শিল্প ও সমাজ সেবায় এম এ মালেকের অবদান 

প্রতিবেদক
Khairul Islam Alamin
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩ ৭:২৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আল ইমরান, নেত্রকোনা: এম এ মালেক বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্পে অতিপরিচিত, সজ্জল, সদালাপী, পরিশ্রমী, নিরহংকার
সাদা মনের একজন মানুষ। বিনয়ী মানুষটার সাথে হাজী আবদুল লতিফ স্মৃতি পাঠাগারে বসে জানা গেল অনেক অজানা ঘটনাসমূহ। সাক্ষাৎকারটি পড়ে পোল্ট্রি শিল্পের অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন বলে আমার বিশ্বাস।

শুরুর কথাঃ
এম এ মালেক, পিতাঃ হাজী মোঃ আবদুল লতিফ, গ্রামঃ বালিয়াপাড়া, গৌরীপুর, জেলাঃ ময়মনসিংহ । ১৯৯১ সালে এসএসসি পাশ করার পর ময়মনসিংহের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাসিরাবাদ কলেজে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। যতাসময়ে ১৯৯৩ তে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ১৯৯৫ সালে উক্ত কলেজ হতে বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করে আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে একাউন্টিং এ মাস্টার্স এ ভর্তি হয়ে পুরাণ ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে আসেন।

কোন এক বিকেলে ঘুরতে ঘুরতে ইত্তেফাক অফিসের সামনে দেয়াল পত্রিকায় বেলী চিকেন হ্যাচারী এন্ড পোল্ট্রিতে চাকুরির বিজ্ঞপ্তিতে একজন অনভিজ্ঞ হিসাবরক্ষক আবশ্যক দেখতে পান, তা দেখে উক্ত অফিসে যান। বেলী হ্যাচারীর ঢাকাস্থ অফিস ছিল তখন এলিফ্যান্ট রোড। সময়টা ছিল তখন ১৯৯৬ সালের মে মাসের ২০ তারিখ।

সাক্ষাৎকার দেন, সাক্ষাৎকার খুবই সুন্দর হয় এবং একাউন্ট অফিসার হিসেবে চাকুরী হয়ে যায়। চাকুরী হওয়ার ঘটনাটি একটি কাকতালীয় এবং একটি মজার ঘটনাও বটে। যা হোক, ১৯৯৬ সালের ২৫ মে তাকে সাভারের ফুলবাড়ীয়ায় বেলী হ্যাচারীর মূল অফিসে পোস্টিং দেওয়া হয়। সাভারে যাওয়ার পর দেখতে পেলেন সেই ফ্যাক্টরীতে প্রচুর লোকজন কাজ করছে।

ছোট্ট একটা রুম, অবিন্যাস্ত, অগোছালো অফিস এবং বাসা । হতাশ হলেন। ভাবলেন চাকুরী না করলেও পারতেন, ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেন, পরিবারের সবার অগোচরে চাকুরী করবেন কিনা ? বেলী চিকেনের তখনকার জিএম মি. বাসেত এবং চীফ একাউন্টেন্ট সুবল বাবু বিভিন্নভাবে পরীক্ষা নিলেন। তার সততায় মুগ্ধ হয়ে হাতে-কলমে কাজ শিখিয়ে দিলেন।

এখনকার মত সে সময় কম্পিউটার ছিল না। কাজ বুঝে নিলেন, প্রতিষ্ঠানের সকলে ভালোবাসা ও সম্মান দেখাতে লাগলেন, ফলে কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হলো, কাজ ভাল লাগতে লাগলো। শুরু হলো পথচলা। পেশাগত জীবনে অবিরাম ছুটে চলা ।
প্রতিষ্ঠানকে দাড় করাতে কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করলেন।

যেখানে ব্রিডার ফার্ম, ফিড মিল, অফিস, স্টাফ কোয়ার্টার, হ্যাচারী বিল্ডিং এক এক করে ৫টি কন্ট্রোল হাউজ সেটআপ আর জেমসওয়ে কোম্পানীর ৩টি ইনকিউবেটর মেশিন ইনস্টল করে এক পর্যায়ে তিনি এই বেলী হ্যাচারীর ইনচার্জ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন।

এদিকে বেলী হ্যাচারীতে যোগদানের ৪ মাস অতিবাহিত হলেও বাড়ির সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না। ফলে তার বাবা নিজেই অফিসে এসে খোজ-খবর নিলেন, অসন্তুষ প্রকাশ করলেন। এম এ মালেক বলেন, বাবার ইচ্ছা ছিল লেখাপড়াটা চালিয়ে যাই। আমি বাবাকে বুঝাতে সক্ষম হলাম যে, চাকুরীর পাশাপাশি আমি লেখাপড়া চালিয়ে যাব। যার ফলশ্রুতিতে যতাসময়ে তিনি ২০০৭ সালে ঢাকার বনানীস্থ USA হতে মার্কেটিং এ এমবিএ সম্পন্ন করেন।

তিনি বলেন বেলী হ্যাচারীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে আমি কাজ করিনি। যেমনঃ- ভ্যাকসিনেশন, ক্রডিং, ডিবেকিং, লিটার ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য তৈরি, চিকস প্যাকিং, ডিওসি এর ভ্যাকসিনেশন, ফিড ফর্মুলেশন ইত্যাদি।

এক কথায় সকল কাজের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। কারন, পুরো সময়টাতে আমার সাথে কোন ডিভিএম বা এনিমেল হ্যাজবেন্ড্রী ছিল না। সে সময় অনেক সিনিয়র ভাইয়েরা আমাকে বলতেন যে আপনি যত ভালই প্রডাকশন বুঝে থাকেন না কেন কোন একদিন আপনি এই প্রডাকশন ডিপার্টমেন্ট হতে ছিটকে পরতে পারেন কারন – যেহেতু আপনি নন টেকনিক্যাল সুতরাং আপনার মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার তৈরি করা উচিত। আমি এটাকে পজিটিভ হিসেবে নেই এবং মনে মনে সেলস্ এন্ড মার্কেটিং
এ কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করি।

তার কিছুদিন পর আমি যখন প্যারেন্টস স্টকের ভ্যাকসিনেশন এ কাজ করছি ঠিক তখন একটি অপরিচিত মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন আসে। সেই ব্যক্তি হলেন জনাব জিএইচএন এরশাদ (বর্তমানে তিনি আমান ফিডে সিইও হিসাবে কর্মরত আছেন)। তিনি বললেন আপনাকে ঢাকার মহাখালী ব্রাক সেন্টারে আসতে হবে ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এ ইনটারভিউ এর জন্য। কারন ইনডেক্স এগ্রো এই শিল্পে একজন অল রাউন্ডার খুজছে। আমি যেহেতু অল সাইড দেখি যেমন প্রোডাকশন, একাউন্টস, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি সে হিসেবে তাদের মতে আমি একজন অল রাউন্ডার। সাক্ষাৎকার শেষে ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব মাহিন মাজহার স্যার আমাকে তার প্রতিষ্ঠানে যোগদান করার জন্য জোর দাবী জানান এবং অনেকটা ব্যাকে এসে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ সেলস্ এন্ড মার্কেটিং এ যোগদান করি এবং আমি আমার পারফরমেন্স শো
করতে পারি। যারফলে মাসের মধ্যে আমার পারফরমেন্স দেখে প্রতিষ্ঠান আমাকে এসিসট্যান্ট ম্যানেজার পদে পদোন্নতি দেন।

তারপর ডেপুটি ম্যানেজার সেলস্ এন্ড মার্কেটিং এবং হেড অব সেলস্ হিসেবে ৭ বছর সুনামের সাথে কাজ করেছি। এরপর ২০০৯ সালের ১৬ আগস্ট ম্যানেজার সেলস্ এন্ড মার্কেটিং হিসেবে আমান ফিডে যোগদান করি। তখনকার সময় যদিও আমান ফিডের বয়স ছিল সাড়ে তিন বছর, তার মধ্যে তাদের সর্বোচ্চ সেলস ছিল মাসে ৭০০ মেঃ টন। আমান ফিড কে আমান গ্রুপ ক্যান্সার প্রজেক্ট হিসেবে মূল্যায়ন করত। আর সেই ক্যান্সার প্রজেক্ট এর কান্ডারী হিসেবে আমাকে নিয়োগ দান
করেন।

আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করি এবং ৭০০ মেঃ টন কোম্পানীকে ২৮৭০০ মেঃ টনে উন্নীত করি। যাদের কোন ব্রিডার ফার্ম ছিল না। আমি যোগদান করে ব্রিডার ফার্মের জমি কেনা থেকে শুরু করে ৩টা ব্রিডার ফার্ম, ২টা হ্যাচারী স্থাপন করি। যাতে সপ্তাহে ৭.৫ লক্ষ বাচ্চা উৎপাদিত হতো। এমতাবস্থায় প্রায় সাড়ে ১১ বছর আমান ফিডে কাজ করার পর নতুন কিছু স্বপ্ন, নতুন কিছু প্রত্যয় নিয়ে আস্থা ফিডে সিওও (COO) হিসেবে গত ১৬ মার্চ ২০২০ সালে যোগদান করি। আস্থা ফিডে যোগদান করে রেন্টাল (Rental) ফিড মিল দিয়ে আস্থা ফিডের যাত্রা শুরু করে আজ এক এক করে ৫টি ফিড মিল হতে ফুল টাইম প্রোডাকশন করে সম্পূর্ন ক্যাশ টাকায় মাসে ১৯০০০-২০০০০ মেঃ টন এর মতো ফিড বিক্রয় করে আসছি। আগামী জানুয়ারী ২০২৫ সালের মধ্যে ত্রিশ হাজার (৩০০০০) মেঃ টনে উন্নীত করতে পারবো বলে আশা করছি ইনশাআল্লাহ। এদিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৫টি ফিড মিল একসাথে ইন্সটল করি।

১০ টন ব্রয়লার, ১২ টন লেয়ার, ৮ টন ক্যাটল, ৫ টন সিঙ্কিং, ৫ টন ফ্লোটিং প্রতি ঘন্টায় যা ১লা মে ২০২২ শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলায় দ্বিতীয় ফিড মিলের কাজ খুব দ্রুত আরম্ভ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ । এদিকে শেরপুর জেলার নকলাতে প্রায় ২১ একর জায়গার উপর ব্রিডার ফার্মেও কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে খামারীদের গুনগত মানসম্পন্ন কাঙ্খিত ব্রয়লার বাচ্চা উপহার দিতে পারবো।

এম এ মালেক ব্যক্তিগত জীবনে ২ কন্যা সন্তানের জনক। পরিশেষে তিনি বলেন, সকলের দোয়া এবং আল্লাহর রহমত থাকলে যে স্বপ্ন নিয়ে আস্থা ফিডে যাত্রা শুরু করেছিলাম তাতে এ পোল্ট্রি শিল্পে খামারী ও ডিলার ভাইদের স্পেশাল কিছু দিতে পারবো এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। জনাব এম এ মালেক সাহেব আস্থা ফিড সহ বিভিন্ন কোম্পানিতে এলাকার প্রচুর বেকার ছেলের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

আজকে জব করে তারা সকলেই স্বাবলম্বী। তিনি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের এ ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে তিনি অভিমত পোষণ করেন। পাশাপাশি মালেক সাহেব সামাজিক কার্যক্রমে ও এলাকায় কাজ করতেছেন । তিনি নিজস্ব জমিতে বালিয়াপাড়া বাজারে একটি পাকা ভবন নির্মাণ করে সেই ভবনে তিনি তার পিতার নামে হাজ্বী আবদুল লতিফ স্মৃতি পাঠাগার গড়ে তুলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলেও পাঠাগার তৈরি করেন। বালিজুড়ী কবুলেনেছা গালর্স স্কুল সহ বিভিন্ন স্কুলে পাঠাগার তৈরি বিদ্যমান।

গ্রামীন উন্নয়ন প্রকল্প এন্ড এসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তিনি গড়ে তুলেছেন। সমাজের মানুষের উন্নয়নের জন্য সামাজিক কাজ এবং মানব সেবায় অবদানের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। সর্বশেষ সমাজ সেবায় অবদানের জন্য বীরাঙ্গনা সখিনা অ্যাওয়ার্ড ২০২৩ পেলেন তিনি। এম এ মালেক সাহেব বলেন আমৃত্যু পর্যন্ত তিনি এলাকার মানুষসহ সর্বস্তরের জনগনের জন্য কাজ করতে চান। এজন্য এলাকাবাসী সহ সকলের দোয়া চেয়েছেন।