রাবি প্রতিনিধি :
শহীদ ড. মুহম্মদ শামসুজ্জোহা। দেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। ১৯৮৬ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ড. জোহার শাহাদাত বার্ষিকীকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। ৫২ বছর অতিবাহিত হলেও ১৮ ফেব্রুয়ারি (ড. জোহার শাহাদাতবার্ষিকী) জাতীয় শিক্ষক দিবসের স্বীকৃতি পায়নি।
বৃহস্পতিবার ড. জোহার ৫২ তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে জোহা স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আয়োজন থেকে দিনটিকে জাতীয় শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনসহ অন্যান্য ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শহীদ ড. জোহার সমাধি ও জোহা স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে এবং এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করেন।
এরপর রসায়ন বিভাগ ও শহীদ শামসুজ্জোহা হলসহ অন্যান্য আবাসিক হল, সাংবাদিক সংগঠন, পেশাজীবী সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন শহীদ জোহার সমাধি ও স্মৃতিফলকে ফুল দেন।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে সকাল ১০টায় শহীদ ড. শামসুজ্জোহা স্মরণে আলোচনা সভা হয়। এতে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আবদুস সালামের সাঞ্চালনায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন একুশে পদক প্রাপ্ত রাবির অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. সনৎ কুমার সাহা।
আয়োজনে উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া এবং রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন হাওলাদার।
আলোচনা সভায় সনৎ কুমার সাহা বলেন, ‘ড. সৈয়দ শামসুজ্জোহা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়। তার যে ত্যাগ, অবদান সেটি সমগ্র বাঙ্গালি জাতির জন্য অনবদ্য, অনুকরণীয়, অনুসরণীয়। তিনি বীর পুরুষ ছিলেন। তিনি একজন আদর্শ ছাত্রবান্ধব শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষক হওয়া সহজ কিন্তু সাধারণের শিক্ষক হওয়া কঠিন। তার ভেতর ছাত্র, সহকর্মীদেরকে আপন করে নেয়ার মতো গুণ ছিল। তার মতো শিক্ষককে এখন আর দেখিনা।’
সনৎ কুমার সাহা বলেন, ‘ড. জোহার আত্মত্যাগ ১৯৬৯ সালে দেশের আবছা কল্পনাকে স্পষ্ট করার জন্য একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের অভিভাবকের মতো রক্ষা করতে গিয়ে তিনি জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি আসলে জীবন দেননি বরং এ ঘটনা আমাদেরকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গেছে। তার আত্মত্যাগ মানুষের উদ্দীপনার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল, যেটি স্বাধীনতার পথকে পরিষ্কার করে। স্বাধীনতা কোনো সরলরেখায় ঘটেনি। অতএব জোহা ইতিহাসের একটি অনুপ্রেরণার বাতিঘর।’
ড. জোহার শাহাদাতবার্ষিকীর দিনটি জাতীয় শিক্ষক দিবসের স্বীকৃতি না পাওয়ায় সনৎ কুমার সাহা আক্ষেপ করে বলেন, ‘জোহা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী এবং তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলন আরও তরান্বিত হয়। তবে দিবসটি জাতীয় শিক্ষক দিবস ঘোষণা করা হয়নি যা আমাদের ব্যথিত করে।’
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান আল আরিফ, প্রক্টর ও ভারপ্রাপ্ত ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.লুৎফর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক ড. আজিজুর রহমান, অনুষদ অধিকর্তা, রসায়ন বিভাগসহ অন্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।
এদিকে দিবসটিকে ঘিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি শহীদ ড. জোহা স্মরণে সন্ধ্যা ৭টায় এক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। এছাড়া শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনায় রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ দিন শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে।
দিবসের কর্মসূচিতে আরো রয়েছে, রাবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ জোহর কোরআনখানি ও বিশেষ মোনাজাত, বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে দোয়া মাহফিল, সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে শহীদ শামসুজ্জোহা হলে প্রদ্বীপ প্রজ্বলন।