বিশেষ প্রতিনিধি: ঈদের আর মাত্র ৭ থেকে ৮ দিন বাকি। এরই মধ্যে বিভিন্ন মার্কেট ও ফুটপাতে জমে উঠছে ঈদের কেনাকাটা। বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত দেখা গেছে ক্রেতাদের আনাগোনা। বিপণিবিতানগুলোয় বাড়ছে ভিড়। তৈরি পোশাক কেনার পাশাপাশি নতুন পোশাক বানাতে আগেভাগেই পছন্দের কাপড় কিনছেন তরুণ-তরুণীরা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। তবে দেশে নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা ঈদ বাজারে এসে একটু চিন্তা-ভাবনা করেই কেনাকাটা করছেন। তবে ঈদের আগ মুহূর্তে কেনাবেচা আরও বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। এখন থেকেই মার্কেটে পোশাকসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। ঈদ সামনে এলে আরও দাম বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে অনেকেই আগেভাগে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলছেন।
শপিংমলগুলোর পাশাপাশি নগরীর ফুটপাতেও ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। ক্রেতাদের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে ঈদবাজার। ঈদ ও পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে মাকের্টগুলোয় দেশি-বিদেশি নানা রঙের ও ডিজাইনের বাহারি পোশাক উঠেছে। উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছরই যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক কেনে। প্রতিবারের মতো এবারও উৎসবের অনেকটা আগে থেকেই চলছে কেনাকাটার ধুম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শপিং মল ও বিপণিবিতানে বাড়ছে ভিড়।
ক্রেতাদের এমন ভিড়ে খুশি ব্যবসায়ীরাও। তবে এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে রোজার শুরু থেকে ক্রেতাদের মার্কেটগুলোয় ভিড় করতে দেখা গেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অন্যান্যবারের মতো এবারের ঈদেও তরুণীসহ নারীদের প্রধান আকর্ষণ নতুন কালেকশন। প্রতিদিন সকাল থেকে মিরপুর, নিউ মার্কেট, গুলিস্তান, বসুন্ধরা শপিং সেন্টারসহ যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকার বিভিন্ন মার্কেটগুলোয় ভিড় করছেন ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে তাদের লোকসান হয়েছে। তবে এবার রোজা শুরুর আগে থেকেই দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি ভালো। প্রতিদিন বাড়ছে বেচাকেনা।
নানারকম ব্র্যান্ডের শোরুম ছাড়াও শহরের ফূটপাতের বাজারে রয়েছে নারীদের রেডিমেড পোশাক ও থান কাপড়ের কয়েকটি বড় মার্কেট। এই মার্কেটগুলোয় একদিকে নারীদের রং-বেরঙের পোশাক বিক্রি হচ্ছে, অপরদিকে ঘর সাজানোর জন্য বিছানার নানা ডিজাইনের চাদর ও জানালার পর্দাও বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে ক্রেতাদের সামলাতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। বেশ কয়েকজন দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই বছরের চেয়ে এবারের বেচাকেনা অনেকটাই ভালো। রমজান শুরুর আগে থেকেই এবার ক্রেতারা কেনাকাটা শুরু করেছেন। আমরাও ক্রেতাদের চাহিদামতো পোশাক সরবরাহ করতে চেষ্টা করছি। আমাদের ঈদের বিক্রি রোজার কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে। গত দুই বছর করোনার কারণে আশানুরূপ বেচাকেনা হয়নি। আশা করছি এ বছর সেই ক্ষতিগুলো পুষিয়ে উঠতে পারব।
শহরের বড় বড় শপিংমলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জমে উঠেছে ফুটপাতের বেচাকেনাও। ফুটপাতের ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নেই কোনো আলোর ঝলকানি। ফলে স্বল্প লাভে ফুটপাতের বিক্রেতারা ক্রেতাদের দরদামে পোশাক দিয়ে থাকেন, ক্রেতারাও স্বচ্ছন্দে নিয়ে থাকেন।
সজিব নামের এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বড় দোকানগুলো থেকে আমার পক্ষে প্যান্ট কেনা সম্ভব নয়। এজন্য এখানে নিয়ে এসেছি প্যান্ট কিনতে। পছন্দমতো ৪৫০ টাকা দিয়ে জিন্স প্যান্ট কিনলাম।
ফুটপাতের দোকানদার জীবন জানান, নিজেরাই ব্যবসা করি। এতে কর্মচারীর বেতন, আলোর ব্যবস্থাসহ নানা ধরনের খরচ হয় না। তাই স্বল্প লাভে বড় দোকানের তুলনায় কম দামে পোশাক বিক্রি করতে পারি।
ঈদকে সমানে রেখে প্রতিটি শোরুম ও বিপণিবিতানে পোশাকের ব্যাপক সমারোহ দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সব ধরনের কালেকশন তারা রেখেছেন। তবে গরমে সুতি কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকায় সুতি কালেকশন বেশি রয়েছে। তবে দাম নিয়ে আপত্তির শেষ নেই ক্রেতাদের। বিশেষ করে নিন্ম ও মধ্যআয়ের মানুষরা ঈদবাজারে এসে দর কষাকষিতে হাঁপিয়ে উঠছেন।
জেনিফার নামের এক ক্রেতা জানিয়েছেন, একটা নতুন ডিজাইনের টপস ও থ্রিপিস পছন্দ হয়েছে। কিন্তু দাম বেশি মনে হচ্ছে। তারপরও কিনতে হচ্ছে। কারণ ভালো লাগার পোশাক পরাই তো ঈদের আনন্দ।
রিকশাচালক আনোয়ার হোসেন তার দুই ছেলের জন্য প্যান্ট ও শার্ট কিনছিলেন ফুটপাত থেকে। এ সময় তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শহরে মেলা রিকশা, আগের মতো কামাই নেই। তারপরও যা কামাই হয়, তাক দিয়্যা কোনো রকমে সংসার চলে। ঈদোত ছাওয়াল দুইটাকে কাপড় কিনি দিমু। দামের কারণে মনে হয় আজই কেনা হবার নায়। গতবার এক হাজার ২০০ টাকায় দুজনের কাপড় কিনচু। এবার তো দেড় হাজার টাকাতো কেনা হওছে না।
কে,আই,এ/ঈ,ম